সারা দেশে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতার সব ঘটনা ক্ষমতাসীনরাই ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগে করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশজুড়ে ভীতির রাজত্ব কায়েমের অশুভ উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নৈরাজ্যে লিপ্ত হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা গণপরিবহনে অব্যাহতভাবে অগ্নিসংযোগ করছে। নিরব দর্শকের ভূমিকায় আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জ্বালাও-পোড়াও করে অপরাধীরা খুব সহজেই ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েছে। অথচ প্রত্যক্ষদর্শৗদের মতে, অধিকাংশ ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে বা বড় পুলিশ চেকপোস্টের কাছাকাছি ঘটছে।
তিনি বলেন, অগ্নিসংযোগ প্রতিরোধ কিংবা প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা প্রমাণ করে যে, দেশজুড়ে চলমান নাশকতায় ক্ষমতাসীন অপশক্তি জড়িত। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী ও তাদের আজ্ঞাবাহী পুলিশ সদস্যরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত বেশ কয়েকটি ভিডিও ফুটেজে চালক বা তাদের সহকারীদের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, পুলিশ বা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা তাদের বাসে আগুন দেওয়ার জন্য দায়ী।
উদাহরণ হিসেবে গত ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামের চৌমুহনী বাজারে পুলিশ বক্সের কাছে, ৩১ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের কাছে ও বাংলা মোটরের মোড়ে, ২৮ অক্টোবর কাকরাইলের কাছে বাসে অগ্নিসংযোগ এবং ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে একটি ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ফেনীর স্থানীয় যুবলীগ নেতা নুরুল উদ্দিন টিপুকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার ও ১৪ নভেম্বর নাটোরের তাশরীক জামান রিফাত নামে আওয়ামী লীগের কর্মীকে মুখোশসহ গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা তুলে ধরেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, দেশের সর্বত্র পুলিশ বা র্যাবের শত শত পেট্রোল টিম এবং বিজিবির শত শত প্লাটুন অস্ত্রসজ্জিত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাংলাদেশ যেন পরিণত হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে।
তিনি বলেন, এত নিশ্ছিন্দ্র নিরাপত্তার মধ্যেও বিরোধী দলের সদস্য সহিংসতা বা অগ্নিসংযোগে কাজে লিপ্ত হয় কী করে? সরকার দলের এই দাবি হাস্যকর। বরং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল উপস্থিতির উদ্দেশ্য হয়ত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যেন তারা নিশ্চিন্তে যানবাহনে আগুন দিতে পারে, জনগণের জানমালের ক্ষতি করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন, ২০১৪ সালে ছাত্রলীগের তিন সদস্যকে বাসে অগ্নিসংযোগের সময় হাতেনাতে আটক করা হয়েছিল। ২০১৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দুই ছাত্রলীগ সদস্য ককটেল ও পেট্রোল বোমাসহ আটক হয়েছিল। ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় পেট্রোল বোমাসহ গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর বাধ্য হয়ে পুলিশ দুজন যুবলীগ কর্মীকে ছেড়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ তার নিজস্ব বিহঙ্গ পরিবহনে পেট্রোল দিয়ে আগুন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমের মারফতে জানা যায়। সে আগুনে ১১ জনের মৃত্যুও হয়েছিল। ২০০৬ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগ ট্রেন এবং বাসে আগুন দিয়ে, পরিবহন শ্রমিকদের ওপর হামলা করে হত্যা করেছিল। হোটেল শেরাটনের (বর্তমানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) সামনে গান পাউডার মেরে বাসে আগুন দেওয়াসহ এমন অজস্র দৃষ্টান্ত আছে। যেখানে আওয়ামী লীগ তাদের বিদ্বেষপূর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সহিংসতাকে ব্যবহার করেছ। মানুষ হত্যা করে, জনগণের সহায়-সম্বল ধ্বংস করে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই দায় বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে, মিথ্যা মামলায় ভিন্ন দল ও মতের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাবার যে বিভৎস রাজনীতি আওয়ামী লীগ লালন করে, আমরা তাকে ঘৃণাভরে ধিক্কার জানাই।
পুলিশ গত ২৪ ঘন্টায় সারা দেশে বিএনপির ৪৭৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে এবং বিভিন্ন মামলায় ১ হাজার ৭২০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করেছে।
আগামীকাল (বুধবার) সকাল ৬টা থেকে শুরু হতে যাওয়া ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ সফল করার জন্য দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, আগামীকাল যে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হচ্ছে, সেই কর্মসূচিতে দেশের জনগণ, দলের নেতাকর্মী, সমমনা জোট ও দলের সকল নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে অবরোধ কর্মসূচিকে সার্থক করবেন, সফল করবেন। এই অবরোধ কর্মসূচি আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও দেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার বৃহত্তর আন্দোলনের অংশ।
প্রসঙ্গত, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি আগামীকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিএনপি হরতাল-অবরোধের মতো টানা কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। গত রোববার থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পর এক দিন বিরতি দিয়ে আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো।