স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়া ইঞ্জিন অয়েল ব্র্যান্ড হচ্ছে লিকুই মলি। সম্প্রতি অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাজারে তারা লিকুই মলির নির্দিষ্ট গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েলটি পাচ্ছেন না। অনেকেই আবার ফিসফাস করেছেন, ইঞ্জিন অয়েলটির আমদানিকারক দেওয়ান মটর্স আর লিকুই মলি আমদানি করবে না। বিষয়টি কতটুকু সত্য?
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের দিকে লিকুই মলির ইঞ্জিন অয়েল জার্মানি থেকে আমদানি শুরু করে দেওয়ান মটরস। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের শুরুর দিকে পূর্ণদ্যমে দেশে বাজারজাত করা হয় ব্র্যান্ডটির ইঞ্জিন অয়েল ও অন্যান্য অ্যাডিয়েটিভস। ওই বছর দেশের ইঞ্জিন অয়েল বাজারের ১ শতাংশ দখল করে ফেলে ব্র্যান্ডটি। পরের বছরও ব্যাপক বিক্রির এই ধারা অব্যাহত থাকে। ঝামেলা শুরু হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ইউরোপের দেশগুলো তেল ও গ্যাসের জন্য অনেকটাই রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার তেল আমদানি বন্ধ করে দেয় ইউরোপীয় দেশগুলো। এর ফলে বেড়ে যায় বেজ অয়েলের দাম, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে ইঞ্জিন অয়েল উৎপাদনকারীদের ওপর। জার্মানিতে লিকুই মলির দাম বেড়ে যায়, পণ্যটির আমদানিকারদের ওপর বাড়তি অর্থ গুনতে হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গত বছর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। দেশে ডলারের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। একদিকে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে অনীহা দেখানোয় সঙ্কটে পড়তে হয় বাংলাদেশে লিকুই মলির আমদানিকারক দেওয়ান মটর্সকে।
দেওয়ান মটর্সের বিপণন ও বিক্রয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপক ইমরান নাজির মটো কর্নারকে বলেন, ‘২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সঙ্কট দেখা দিলেও প্রতি তিন চার মাস পরপর আমদের কনটেইনার বন্দরে নামছে। আমাদের মিনারেল ইঞ্জিন অয়েলের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। কারণ চলমান বাজার পরিস্থিতিতে জার্মানি থেকে লিকুই মলির মিনারেল ইঞ্জিন অয়েল এনে বিক্রি করলে তার দাম বেশ বেড়ে যাবে। এতে ব্র্যান্ডটির ওপর আস্থা নষ্ট হবে ক্রেতাদের।’
দেওয়ান মটর্স লিকুই মলি আমদানি বন্ধ করে দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে লিকুই মলির সাময়িক সঙ্কটকে পুঁজি করে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী গুজব ছড়াচ্ছে-দেওয়ান মটর্স আর লিকুই মলি আমদানি করবে না। এটি পুরোপুরি মিথ্যা। আমরা এই মুহূর্তে একরকম বিনা মুনাফায় ব্যবসা করছি। কারণ বাজারে আমরা যে অবস্থানটি তৈরি করেছি, সেটি ধরে রাখতে চাই। আমরা মুনাফার চেয়ে ক্রেতার আস্থাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’
দেওয়ান মটর্সের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে এই মুহূর্তে মিনারেল ছাড়া অন্য সব গ্রেডই পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। ২০২৪ সালের মার্চের দিকে আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’