রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে ২৩ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য ৩৭ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, রাজশাহী-১ আসনে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। এরা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী চিত্রনায়িকা শারমিন আক্তার নিপা মাহিয়া ওরফে মাহি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী আয়েশা আখতার ডালিয়া, মো. আখতারুজ্জামান ও গোলাম রাব্বানী। এই চারজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মনোনয়ন না পেয়ে তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন।
এ আসনে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে বর্তমান সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), মো. শামসুজ্জোহা (বিএনএম), মো. আল-সাআদ (বিএনএফ), জামাল খান দুদু (তৃণমূল বিএনপি), নুরুন্নেসা (এনপিপি), বশির আহমেদ (মুক্তিজোট) ও মো. শামসুদ্দীন (জাতীয় পার্টি)।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশা, রেজাউন নবী আল মামুন ও আবু রায়হান মাসুদ, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. শামীম, গণফ্রন্টের প্রার্থী মো. মনিরুজ্জামান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা মো. শাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র।
বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল (আওয়ামী লীগ), ফজলে হোসেন বাদশা (বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি), আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী (জাসদ), সাইফুল ইসলাম স্বপন (জাতীয় পার্টি), কামরুল হাসান (বিএনএম), ইয়াসির আলিফ বিন হাবিব (মুক্তিজোট) ও মারুফ শাহরিয়ারের (বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি) মনোনয়নপত্র।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে এনপিপির প্রার্থী সইবুর রহমান, মুক্তিজোটের প্রার্থী এনামুল হক, গণফ্রন্টের মো. মনিরুজ্জামান, স্বতন্ত্র নিপু হোসেন এবং আরেক স্বতন্ত্র জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা মো. শাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে আসাদুজ্জামান আসাদ (আওয়ামী লীগ), বর্তমান এমপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েন উদ্দিন, সোলাইমান হোসেন (জাতীয় পার্টি), বজলুর রহমান (বিএনএফ), আবদুস সালাম খান (জাতীয় পার্টি) ও মতিউর রহমান মন্টুর (বিএনএম) মনোনয়নপত্র।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী বাবুল হোসেন, এনপিপির প্রার্থী জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না ও বিএনএফের প্রার্থী মতিউর রহমানের।
বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে আবুল কালাম আজাদ (আওয়ামী লীগ), বর্তমান এমপি ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী এনামুল হক, আবু তালেব প্রামানিক (জাতীয় পার্টি) এবং সাইফুল ইসলাম রায়হানের (বিএনএম) মনোনয়নপত্র।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আহসানুল হক মাসুদ ও ওবায়দুর রহমান এবং বিএসপির প্রার্থী আলতাফ হোসেন মোল্লার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মনসুর রহমান, গণফ্রন্টের মখলেসুর রহমান, জাকের পার্টির শফিকুল ইসলাম, বিএনএমের শরিফুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির আবুল হোসেনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রদল নেতা খাইরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ কর্মী ইসরাফিল ইসলামের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
বৈধ হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী রায়হানুল হক, জাসদের জুলফিকার মান্নান জামী, এনপিপির মহসিন আলী, জাকের পার্টির রিপন আলী, জাতীয় পার্টির শামসুদ্দিন রিন্টু ও বিএনএমের আবদুস সামাদের মনোনয়নপত্র।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘আগে কখনও নির্বাচিত হননি, আবার দলীয় প্রার্থীও নন এমন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সমর্থনের প্রমাণ হিসেবে নির্বাচনী এলাকার ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দিতে হয়। তারা প্রার্থীদের দেওয়া এই স্বাক্ষর থেকে ১০ জন করে ভোটারের তথ্য যাচাই করেছেন। এতে কারও কারও তালিকায় গড়মিল পাওয়া গেছে। আবার কারও মামলা কিংবা ঋণ সংক্রান্ত সমস্যা আছে। সেই কারণে ২৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য ৩৭টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।‘
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় অধিকাংশ প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণার পর চিত্রনায়িকা মাহি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘রিটার্নিং কর্মকর্তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করবেন। আরও অনেক প্রার্থীই রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।’
তফসিল অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করা যাবে ৬ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আপিল নিষ্পত্তি করা হবে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বৈধ প্রার্থীরা ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন। প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ১৮ ডিসেম্বর।