নিউ জিল্যান্ডকে হারাতে মিরপুর শের-ই-বাংলায় কেমন উইকেট বানাবে বাংলাদেশ তা নতুন করে ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে? অতীতের রেকর্ডবুক দেখলে পুরোপুরি ধারণা পাওয়া যাবে। উপমহাদেশের বাইরের দুই দল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াকে একই টোটকায় খাবি খাইয়েছে বাংলাদেশ।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করা সিরিজে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে অতিথিদের ৩২ উইকেট নিয়েছিলেন স্পিনাররা। পরের বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র করা সিরিজেও ৩৪ উইকেট পেয়েছেন স্পিনাররা। মিরপুরের সাফল্যের হার আরেকটু বেশি। নিউ জিল্যান্ড দলও জানেন তাদের জন্য এমন কিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। তাইতো দলের অধিনায়ক টিম সাউদি অকপটে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, উইকেট স্পিন সহায়কই হবে।
‘হ্যাঁ, আপনি বিশ্বের এই অংশে খেলতে আসলে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, স্পিনাররা বড় ভূমিকা পালন করবে। আমরা প্রথম ম্যাচেও তা দেখেছি। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই প্রত্যাশা করছি। যদিও আমরা দেখেছি, কাইল (জেমিনসন, পেসার) প্রথম ম্যাচে বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করেছিল। আশা করছি এই ম্যাচেও পারবে। তবে লড়াইটা স্পিনারদের ভেতরে হবে বলতে দ্বিধা নেই। এটা আমরা দ্বিতীয় টেস্টে প্রত্যাশা করছি।’
বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া নিউ জিল্যান্ড, সেটা অধিনায়কের কথায় বোঝা গেছে, ‘প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া সব সময়ই হতাশার। তবে আমাদের সুযোগ আছে দ্বিতীয় টেস্টে ভালো ক্রিকেট খেলার। ভিন্ন কন্ডিশন। আমাদেরকে এখানে মানিয়ে নিয়ে ভালো খেলার সুযোগ খুঁজতে হবে। আমরা মাঠে নামতে মুখিয় আছি। উপমহাদেশের এই কন্ডিশনে এসব চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ভিন্ন আমেজ রয়েছে। আগামী পাঁচ দিন সেই চ্যালেঞ্জ নিতে আমরা মুখিয়ে।’
শেষ ৫ বছরে মিরপুরে হওয়া ৭ টেস্টে বোলাররা পেয়েছেন ২১৫ উইকেট। যেখানে স্পিনাররা নিয়েছেন ১২৬ উইকেট। পেসাররা ৮৯। বাংলাদেশের সাফল্য ১০৮ উইকেট। দশ স্পিনার পেয়েছেন ৬৯ উইকেট। ৬ পেসাররা পেয়েছেন বাকি ৩৯ উইকেট। এই বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সিলেট টেস্টের নায়ক তাইজুল। বাঁহাতি স্পিনার ২৫.৩৮ গড় ও ২.৫৩ ইকোনমিতে পেয়েছেন ৩১ উইকেট। মেহেদী হাসান মিরাজ ২৮.৬১ গড় ও ২.৫২ ইকোনমিতে ১৩ উইকেট পেয়েছেন। সমান সংখ্যাক উইকেট সাকিবের। তার গড় ২৪.৪৬, ইকোনমি ২.৮৯। এছাড়া নাঈম হাসানের উইকেট ১২টি।
এসব উইকেটে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট নিরাপদ পথ কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে। সিলেটে নাজমুল হোসেন শান্তর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। ঢাকায় একই উপায়ে সফল হওয়া যাবে কিনা সেই প্রশ্নও উঠছে। সাউদি অবশ্য আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের ভাবনা নিয়ে মাঠে নামতে নারাজ। তার কণ্ঠে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিংয়ের টোটকা, ‘আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক ব্যাটসম্যানের ভিন্ন স্টাইল রয়েছে। বাংলাদেশ দলে যেমন শান্ত কিছুটা বেশি আক্রমণাত্মক খেলে মুমিনুলের চেয়ে। এটা যার যার ব্যাটিংয়ের ধরণ। আমাদের ছেলেরাও তাদের থেকে ভিন্ন। এজন্য নিজেদের স্টাইলে বিশ্বাস করা এবং মাঠে যেগুলো পারে সেগুলোই বারবার করা উচিত।’
নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্ট সাউদি, ‘আমরা শেষ ম্যাচের পর আলোচনায় বসেছিলাম। লম্বা সময় ধরে বোলিংয়ে ধারাবাহিকতা থাকা জরুরী। সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের বড় জুটিও গড়তে হবে। আমাদের ভালোমানের ট্রেনিং হয়েছে শেষ দুদিন। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে আমরা টেস্ট ম্যাচে মাঠে নামার অপেক্ষায়।’
এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে প্রবল আলোচনায় মিচেল সান্টেনার ও রাচীন রাবিন্দ্র। দুজনের কেউই সিলেটে খেলেননি। এজাজ পাটেল ও ইশ শোধীকে নিয়ে মাঠে নেমেছিল কিউইরা। এজাজ পাটেল পারলেও শোধী তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। তাই সান্টেনার ও রাচীনকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শেষ দুদিনে তাদের অনুশীলন দেখেও বোঝা গেছে মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তারা। তবে সাউদি নির্দিষ্ট কারো সুযোগের কথা সরাসরি বলেননি, ‘হ্যাঁ আমাদের ১৫ জনের সুযোগ আছে খেলার। প্রত্যেকেই মাঠে নামতে মুখিয়ে। আমরা আগামীকাল সকালে উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেব কোন ১১ জনকে নিয়ে নামবো। ১৫ জনই ফিট আছে এবং নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত।’