যুদ্ধকৌশলে পারদর্শীতার কারণে সঙ্গীরা তাকে ডাকতেন ‘টাইগার’। পাকিস্তানি বাহিনীর ছোড়া বুলেট কপালে বিদ্ধ হয়ে রণাঙ্গনেই শহিদ হন তিনি। তখন সঙ্গীরা চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘আমাদের টাইগার আর নেই!’ সেই দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরের মহানন্দা নদীর তীরে প্রাণ হারান বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। জাতির এ সূর্যসন্তানকে সামাহিত করা হয় জেলার সোনামসজিদ প্রাঙ্গনে। আজ এ যোদ্ধার ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী।
মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ, সাহসিকতা ও বীরত্বের কারণে স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধু সরকার কর্তৃক ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাব দেওয়া হয়। এই স্বাধীনচেতা যোদ্ধাকে শুধু তার শাহাদাৎবার্ষিকীর দিন স্মরণ করেন জেলাবাসী। বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা বলছে- কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এমন হাল।
জানা গেছে, জেলায় বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর-এর নামে ৩টি কলেজ আছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ১টি ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ২টি কলেজ রয়েছে। জেলা সদরের কলেজটি বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিনের নামে চিনলেও বাকি দুইটিকে সোনামসজিদ ডিগ্রি কলেজ ও রাধাকান্তপুর কলেজ নামে চেনেন অনেকেই। এছাড়া, ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিনের নামে মহানন্দা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ হলেও, এই সেতুকে ‘বারঘরিয়া ব্রিজ বা মহানন্দা সেতু’ নামেই চেনেন স্থানীয়রা।
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, তরুণ প্রজন্মের অনেকই। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও এই যোদ্ধার নামে সংগ্রহশালা নির্মাণ না হওয়ায় দুঃখজনক বলছেন তারা।
জেলাবাসীর দাবি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্মাণ করা হোক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি সংগ্রহশালা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের লেখক ও সাংবাদিক সাজিদ তৌহিদ বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন, তিনি এই মাটিতেই শুয়ে আছেন। এই জেলায় তার নামে সংগ্রহশালা অনেক অগেই নির্মাণ করা উচিত ছিল। স্বাধীনতার ৫২ বছর পরেও তার নামে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ হয়নি এটা দুঃখজনক।’
তিনি আরও বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সংগ্রহ করতে একটু কষ্ট হবে, কিন্তু যতটুকু পাওয়া যায় সেটুকুই সংগ্রহ করা উচিত।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর একদিকে সাহসী যোদ্ধা ছিলেন, অন্যদিকে তার ছিল গভীর দেশপ্রেম। একাত্তরে পূর্ব-পাকিস্তানে কর্মরত অবস্থায় সেখান থেকে পালিয়ে এসে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় তিনি কেমন দেশপ্রেমিক ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অসীম সাহসী-সেনানায়ক। শত্রুদের ওপর ঝাপিয়ে পড়তে কখনও দ্বিধাবোধ করতেন না।’
তিনি মনে করেন, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটা সংগ্রহশালা নির্মাণ করা সম্ভব হলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানবে এই শহিদের শ্রেষ্ঠত্বের কথা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন বলেন, ১৪ ডিসেম্বর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শাহদাত বার্ষিকী। আমরা সরকাররে কাছে আবেদন জানাচ্ছি, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নামে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হোক। এ সংগ্রহশালা থেকে আগামী প্রজন্ম অনেক কিছু শিখবে এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানবে।