ভোর ৬টা। সকালের আলো পুরোপুরি ফোটেনি। এরই মধ্যে জাতীয় পতাকা হাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন সড়কের পাশে বাবার হাত ধরে অপেক্ষা করছিল ছয় বছরের শিশু মালিহা। উপলক্ষ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও বিজয় উদযাপন।
শুধু শিশু মালিহা নয়, শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শিশু, তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়স্ক, বৃদ্ধ, শ্রমিক, কৃষক, রাজনৈতিক, সামাজিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছিল। দিন জুড়ে তারা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের।
আরও পড়ুন: মহান বিজয় দিবস আজ
শ্রদ্ধা জানাতে আসা সবার কণ্ঠে ছিল- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শপথ নিয়ে অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনের। আবার রাজনীতিবিদদের মুখে উঠে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা।
আরও পড়ুন: বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
ভোর সাড়ে ৬টায় মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসেন রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২৫ মিনিট পর তার স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করেন। ৭টার দিকে সৌধ ফটক সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। সৌধ বেদিকে কেন্দ্র করে নামে জনতার ঢল। হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সারিবদ্ধভাবে বেদিতে ফুল দেন আগতরা।
আশুলিয়া থেকে বাবার সঙ্গে ফুল দিতে এসেছিল ৯ বছরের শিশু মারিয়া আক্তার। মুখে আঁকা জাতীয় পতাকার ছবি। হাতে আরেকটি পতাকা। সে বলছিল, ‘মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন। দেশ গঠন করেছেন। তাদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি।’
আরও পড়ুন: নির্বাচনের বিরোধীতাকারীরা রাজনীতি ধ্বংস করতে চায়
স্ত্রী-সন্তানসহ স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কারখানা ছুটি আজ। তাই পরিবারকে নিয়ে এখানে এসেছি। শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’
আরও পড়ুন: ছয় সপ্তাহে বিএনপির ২৩ হাজার নেতাকর্মী কারারুদ্ধ
এদিন শ্রদ্ধা জানাতে এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান রাজনীতিকরা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়েছি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ। এরপর ২১০০ সালের পরিকল্পনা। একটা ভিশন নিয়ে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে।’ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ও মূল্যবোধে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গত ২৮ নভেম্বরের পর প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে বড় জমায়েত নিয়ে স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির দুই নেতা মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে ফুল দেন দলটির নেতাকর্মীরা।
মঈন খান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরে এখানে আমরা কোন বিজয় উদযাপন করতে এসেছি। বাংলাদেশের সরকারের সামনে দেশের মানুষকে সেই প্রশ্ন তুলে ধরতে হবে। এটা কিসের বিজয়। এটা কি এক দলীয় শাসনের বিজয় নাকি একনায়কতন্ত্রের শাসনের বিজয়। নাকি এমন একটি সরকার চলছে, যারা মানুষকে কথা বলতে দেয় না। যারা মানুষকে ভোট দিতে দেয় না। যারা মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের বিজয়।
সরকারের কঠোর সমালোচনা ও নির্বাচনকে একতরফা আখ্যা দিয়েছেন বাংলাদেশ বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বামপন্থী দলগুলোর নেতারা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কঠোর সমালোচনা করে মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে এমন তামাশা, এরকম প্রহসন এর আগে দেশে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের বিল্পবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
আবার ১৯৯০ সালের পর একমাত্র হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলেই সুশাসন ছিল, আর গত ২৪ বছরে সুশাসন নিশ্চিত হয়নি বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টি নেতা খলিলুর রহমান।
প্রসঙ্গত, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে প্রায় একমাস ধরে সৌধ এলাকায় সংস্কার ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করে গণপূর্ত বিভাগ। ঢাকা জেলা পুলিশের একাধিক দল নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দিয়েছিল স্মৃতিসৌধসহ আশপাশের এলাকা। স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যান চলাচল সীমিত রাখা হয়। কড়া নিরাপত্তায় উৎসবমুখর পরিবেশে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দিবসটি উদযাপন করা হয়।