রূপকথাতেই এমন হয় এবং রূপকথা কখনো কখনো বাস্তবেও নেমে আসে। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে টানা ৩২ ম্যাচে কখনো জিততে না পারা বাংলাদেশ পরের ৮ ম্যাচে খোলনলচেই পাল্টে দিল। জয়ের দেখা পেল তিন ফরম্যাটে। প্রথমে টেস্টে। পরে ওয়ানডে। সবশেষ টি-টোয়েন্টি।
বুধবার নেপিয়ারে বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার তাদের মাটিতে জিতেছে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তাতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সফরকারীরা। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে নয় ম্যাচ খেলার পর প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ।
টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিধ্বংসী ব্যাটিং লাইনলাপের বিরুদ্ধে নিজেদের বোলারদের চ্যালেঞ্জে পাঠিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বোলারদের দ্যুতিময় পারফরম্যান্সে বাজি জিতে যান শান্ত। স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের জ্বলে উঠার আগে তাদের থামিয়ে দেন ১৩৪ রানে। বোলাররা পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে পাশ করলেও ব্যাটসম্যানরা টেনে টুনে ৩৩!
সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একের পর এক ব্যাটসম্যান যেভাবে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন তাতে একটা সময়ে ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল। তীরে এসে তরী ডোবানোর একাধিক ঘটনা থাকায় শেষ রান পর্যন্ত ম্যাচ পেন্ডুলামে ঝুলে ছিল। অবশেষে ৮ বল আগে মাহেদী মিলনের বলে এগিয়ে এসে মিড অফ দিয়ে চার মেরে জয়সূচক রানটি নিলে জয় নিশ্চিত হয় লাল সবুজের প্রতিনিধিদের। জয়ের নায়ক মাহেদী। বল হাতে ২ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে ১৬ বলে ১৯ রান করে দলকে জিতিয়েছেন।
উইকেট ছিল একটু ধীর গতির। বল থেমে থেমে গেছে ব্যাটে। বল খুব বেশি সুইং করছিল না। সতেজ উইকেটে যা খুব কাজে দেয় বাংলাদেশের বোলারদের। নতুন বলের সুবিধা কাজে লাগিয়ে টপাটপ উইকেট তুলে নেন মাহেদী-শরিফুল। তাতে এক সময়ে নিউ জিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডের চিত্রটা ছিল এরকম, ২০/৪। স্কোরবোর্ডে কোনো রান না তুলে ইনিংসের চতুর্থ বলে টিম শেইফার্ট মাহেদীর বলে বোল্ড হন। দ্বিতীয় ওভারে শরিফুল ফিন অ্যালেনকে স্লিপে তালুবন্দি করানোর পর ফিলিপসকে এলবিডব্লিউ করেন রিভিউ নিয়ে। পরপর দুই উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেও পাননি।
ইনিংসের ২০তম বলে গ্লেন ফিলিপসের ব্যাট থেকে কিউইরা প্রথম বাউন্ডারি পায়। ডানহাতি দীর্ঘদেহী ব্যাটসম্যান বিপজ্জনক হয়ে উঠার আগে থেমে যান মাহেদীর ঘূর্ণিতে। সেখান থেকে চাপম্যান ও নিশামের ৩০ রানের জুটিতে কিছুটা আলো আসে স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে। চাপম্যান তানজীমকে মিড উইকেটে তুলে মেরে প্রথম ছক্কা হাঁকান পাওয়ার প্লে শেষ হবার ১ বল আগে। কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ইনিংস বড় করতে পারেননি। রিশাদের বলে তানজীমের হাতে ক্যাচ দেন ১৯ রানে। এরপর কেবল নিশামই যা লড়েছেন। প্রতি আক্রমণে গিয়ে ২৯ বলে ৪৮ রান করেন ৪ চার ও ৩ ছক্কায়। এছাড়া অধিনায়ক স্যান্টেনার ২৩ ও মিলনে ১৬ রান করে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
রান আরো কিছু কমও হতে পারতো যদি শেষ দিকে তালগোল পাকানো ফিল্ডিং না হতো। রিশাদ ও রনির মাঝ দিয়ে হাওয়ায় ভাসা বল বেরিয়ে যায়। রিশাদের হাত ফসকে বেরিয়ে যায় ক্যাচ। এই টুকু আড়াল করলে বোলিংটা হয়েছে দুর্দান্ত। ২৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শরিফুল বাংলাদেশের সেরা। ১৪ রানে মাহেদী পেয়েছেন ২ উইকেট। মোস্তাফিজ ১ রান বেশি দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেটই। কিন্তু তাদের বোলিং আড়াল হয়ে যায় ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং ব্যর্থতায়।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে শুরু থেকে ছিল জুটির অভাব। রনি ৭ বলে ১০ রানে ফেরেন অতি সহজে। অধিনায়ক শান্তর ইনিংস থেমে যায় ১৪ বলে ১৯ রানে। সৌম্য পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ১৫ বলে ২২ রান করেন। এছাড়া তাওহীদ ১৯ ও আফিফ ১ রানে হাল ছেড়ে দেন। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে লিটনের ইনিংস দ্রুত আগাতে পারেনি। ষষ্ঠ উইকেটে মাহেদীর সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন ৪০ রানের জুটি বাংলাদেশকে এনে দেয় কাঙ্খিত জয়। লিটন ৩৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন।
বিপর্যয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত হাল না ছেড়ে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ঠিকই। নেপিয়ারে শেষ হাসিটা হাসলেও উন্নতির সুযোগ রয়েছে আরো। পরের দুই ম্যাচে সেই ছাপ পড়ে নাকি সেটাই দেখার।