বিদায় নিচ্ছে ২০২৩। নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকা এ বছরটিতে প্রাপ্তি ও হারানোর তালিকা বেশ লম্বা৷ বিশেষ করে আসাদ চৌধুরী, মিলান কুন্ডেরা, করম্যাক ম্যাকার্থি, মোহাম্মদ রফিক, ইকবাল হাসান, পান্না কায়সার, সমরেশ মজুমদার, সুবিমল মিশ্র ও মলয় রায়চৌধুরীর মৃত্যু যেন সাহিত্যাঙ্গনে বয়ে গেছে বিরহ বাতাস। বছরের শেষের দিকে কবি, গল্পকার ও কথাসাহিত্যিক আবু বকর সিদ্দিক এর মৃত্যু বাংলাদেশের সাহিত্যঙ্গনে শোকের পরিমাপ যেন সবকিছু ছাপিয়ে যায়। এসব নিয়েই সাজানো হয়েছে শিল্প সাহিত্যঙ্গনের সালতামামি-২০২৩।
আসাদ চৌধুরী কবি আসাদ চৌধুরী কানাডায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ অক্টোবর কানাডার টরন্টোর স্থানীয় একটি হাসপাতালে মারা যান। ১৯৮৩ সালে কবি আসাদ চৌধুরী রচিত ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া একই বছর তিনি সম্পাদনা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনী ভিত্তিক গ্রন্থ ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু।’
কবি আসাদ চৌধুরী ১৯৪৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতার নাম সৈয়দা মাহমুদা বেগম। কবির পিতার নাম মোহাম্মদ আরিফ চৌধুরী ওরফে ধনু মিয়া।
মিলান কুন্ডেরা কথাসাহিত্যিক মিলান কুন্ডেরা প্রয়াত হয়েছেন। তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর। গত ১২ জুলাই মিনাল কুন্ডেরা গ্রন্থাগারের মুখপাত্র আন্না রাজোভার বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
কুন্ডেরার স্যাটায়ার ও কবিতার মতো গদ্য লেখনী জীবনের বিভিন্ন চিত্তাকর্ষক দিককে পাঠকের সামনে উন্মোচন করেছে। ভিন্নমত প্রকাশের জন্য চেক নাগরিকত্ব হারিয়েছিলেন তিনি। এই অভিজ্ঞতার বিষয়টি তার লেখনীকে প্রভাবিত করেছে।
তার সমালোচনামূলক গ্রন্থ ‘আর্ট অব নোভেল’ (১৯৮৬) এ তিনি জীবন সম্পর্কে বলেন, ‘(এটি) একটি ফাঁদ, যা আমরা সব সময়ই জেনে এসেছি: আমাদের সম্মতি না নিয়েই আমাদের জন্ম দেওয়া হয়, আমরা এমন এক দেহে আটকা পড়ি যা আমরা নিজেরা পছন্দ করে বাছাই করিনি এবং আমাদের একমাত্র নিয়তি হচ্ছে অবধারিত মৃত্যু।’
১৯২৯ সালে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার বেরনো শহরে জন্ম নেন কুন্ডেরা। তার বাবা ছিলেন একজন প্রখ্যাত পিয়ানোবাদক। প্রাগে অধ্যয়ন করেন তিনি। সে সময় তিনি সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন এবং ফরাসি কবি অ্যাপোলিনেয়ারের কবিতা অনুবাদের পাশাপাশি নিজেও কিছু কবিতা লেখেন।
এছাড়া, একটি স্কুলে শিক্ষার্থীদের চলচ্চিত্র নির্মাণ বিষয়ে পাঠদান করেন তিনি। তার ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন পরবর্তীতে অস্কার বিজেতা পরিচালক মিলোস ফোরম্যান। কুন্ডেরার প্রথম উপন্যাস ছিল ‘দ্য জোক’। এই ডার্ক হিউমারভিত্তিক উপন্যাস ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয়। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে লেখা এই উপন্যাস চেকোস্লোভাকিয়ায় নিষিদ্ধ করা হলেও তিনি এ লেখার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি ও তার স্ত্রী ভেরা ফ্রান্সে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। সেখানে তারা রেনেঁ বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর সহ-অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
১৯৭৯ সালে তাদের চেক নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়। তার সবচেয়ে বিখ্যাত লেখা ‘দ্য আনবিয়ারেবল লাইটনেস অফ বিয়িং’ ১৯৮৪ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে এ লেখার ভিত্তিতে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ হয়। এতে অভিনয় করেন জুলিয়েট বিনোশ ও ড্যানিয়েল ডে-লুইস। এই উপন্যাসটি নৈতিকতা বিষয়ের ওপর লেখা। এতে ব্যক্তিগত ও সামগ্রিক পর্যায়ে স্বাধীনতা ও আবেগ নিয়ে বলেছেন লেখক। ২০১৩ সালে ১৩ বছর বিরতির পর আবারো নতুন এক উপন্যাস প্রকাশ করেন কুন্ডেরা। ২০১৯ সালে চেক প্রজাতন্ত্র কুন্ডেরার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয় এবং ২০২৩ সালে তার আদি নিবাস বিরনোতে মিলান কুন্ডেরা পাঠাগার স্থাপিত হয়।
করম্যাক ম্যাকার্থি পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী আমেরিকান লেখক করম্যাক ম্যাকার্থি মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিলো ৮৯ বছর। গত ১৪ জুন লেখকের ছেলে জন ম্যাকার্থির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে টাইম ও ইন্ডিয়া টুডে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে-তে নিজ বাড়িতে লেখক করম্যাক ম্যাকার্থির মৃত্যু হয়। দীর্ঘদিন ধরে তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
‘দ্য বর্ডার ট্রিলজি’র প্রথম বই ‘অল দ্য প্রিটি হর্সেস’ ১৯৯২ সালে করম্যাক ম্যাকার্থিকে প্রথম আলোচনায় নিয়ে আসে। বইটি থেকে পরবর্তীতে সিনেমা নির্মাণ করা হয়। ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তেমন পরিচিতি ছিলো না ম্যাকার্থির। ২০০৬ সালে ‘দ্য রোড’ উপন্যাসের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়ার পর তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। অনেকেই তাকে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ও উইলিয়াম ফকনারের পর সবচেয়ে শক্তিশালী আমেরিকান লেখক বলে মনে করেন।
সমরেশ মজুমদার কালপুরুষ, কালবেলাসহ একাধিক কালজয়ী উপন্যাসের লেখক প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার (৮১) মারা গেছেন। গত ৮ মে ভারতের স্থানীয় সময় পৌনে ৬টায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান এই কথাসাহিত্যিক। সমরেশ মজুমদার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪২ সালের ১০ মার্চ। কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবনে তিনি আনন্দবাজার পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেডএর সাথে যুক্ত ছিলেন। গ্রুপ থিয়েটারএর প্রতি তার প্রচণ্ড আসক্তি ছিলো। তার প্রথম গল্প ‘অন্যমাত্রা’ লেখাই হয়েছিলো মঞ্চনাটক হিসাবে, আর সেখান থেকেই তার লেখকজীবনের শুরু। তার লেখা অন্যমাত্রা ছাপা হয়েছিলো দেশ পত্রিকায় ১৯৬৭ সালে।
সমরেশ মজুমদারের প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’ ছাপা হয়েছিলো দেশেই ১৯৭৫ সালে। তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে সাতকাহন, তেরো পার্বণ, স্বপ্নের বাজার, উজান, গঙ্গা, ভিক্টোরিয়ার বাগান, আট কুঠুরি নয় দরজা, অনুরাগ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তার ট্রিলজি ‘উত্তরাধিকার’, ‘কালবেলা’, ‘কালপুরুষ’ বাংলা সাহিত্য জগতে তাকে বিশেষ খ্যাতির অধিকারী করেছে।
সমরেশ মজুমদার ১৯৮২ সালে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার, বঙ্কিম পুরস্কার এবং আইআইএমএস পুরস্কার জয় করেছেন। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে জয় করেছেন বিএফজেএ দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির অ্যাওয়ার্ড। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় তিনি।
মোহাম্মদ রফিক কবি মোহাম্মদ রফিক আর নেই। গত ৬ আগস্ট বরিশাল থেকে ঢাকা ফেরার পথে তার মৃত্যু হয় বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। মোহাম্মদ রফিকের জন্ম ২৩ অক্টোবর ১৯৪৩ সালে বাগেরহাটে। ২০১০ সালের একুশে পদকপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন তিনি।একজন মননশীল আধুনিক কবি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া মোহাম্মদ রফিক খুলনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর রাজশাহী সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন এবং স্নাতক শেষ করেন।
তার আত্মপ্রকাশ ১৯৬০-এর দশকে। পাকিস্তান আমলে ছাত্র আন্দোলন ও কবিতায় এবং স্বাধীন বাংলাদেশে আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যুগিয়ে তিনি বিখ্যাত হয়েছেন।
১৯৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখী পূর্ণিমা’ প্রকাশিত হয়। ১৯৭৬ সালে প্রকাশ পায় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধুলার সংসারে এই মাটি’।
কবির উল্লেখযোগ্য অন্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো- কীর্তিনাশা (১৯৭৯), খোলা কবিতা ও কপিলা (১৯৮৩), গাওদিয়ায় (১৯৮৬),স্বদেশী নিশ্বাস তুমিময় (১৯৮৮), মেঘে এবং কাদায় (১৯৯১), রূপকথা কিংবদন্তি (১৯৯৮), মৎস্য গন্ধ্যা (১৯৯৯), মাতি কিসকু (২০০০), বিষখালি সন্ধ্যা (২০০৩), নির্বাচিত কবিতা (২০০৩),কালাপানি (২০০৬), নির্বাচিত কবিতা (২০০৭), নোনাঝাউ (২০০৮), দোমাটির মুখ (২০০৯), ত্রয়ী (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-১ (২০০৯), মোহাম্মদ রফিক রচনাবলী-২ (২০১০)। কবিতার পাশাপাশি তার গদ্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ভালবাসার জীবনানন্দ (২০০৩), আত্মরক্ষার প্রতিবেদন (২০০১), স্মৃতি বিস্মৃতির অন্তরাল (২০০২)। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান মোহাম্মদ রফিক। এছাড়া আলাওল পুরস্কারসহ (১৯৮১) বিভিন্ন পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।
আবু বকর সিদ্দিক কবি, গল্পকার ও রাজনীতিবিদ বিদিশা সিদ্দিকের বাবা প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবু বকর সিদ্দিক মারা গেছেন। গত ২৮ ডিসেম্বর তিনি খুলনা সিটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
আবু বকর সিদ্দিক ১৯৩৪ সালের ১৯ আগস্ট মামারবাড়ি বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে চাখার ফজলুল হক কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজ, বাগেরহাট পিসি কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
১৯৯৪ সালের ৭ জুলাই তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ২০টির অধিক কাব্যগ্রন্থ, চারটি উপন্যাস, ১৫টি গল্পগ্রন্থ ও একটি ছড়াগ্রন্থ। ধবল দুধের স্বরগ্রাম (১৯৬৯), বিনিদ্র কালের ভেলা (১৯৭৬), হে লোকসভ্যতা (১৯৮৪), মানুষ তোমার বিক্ষত দিন (১৯৮৬) তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে অন্যতম।
আবু বকর সিদ্দিক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ কথাশিল্পী সংসদ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
সুফিয়া খাতুন গত ৭ জানুয়ারি মারা যান লেখক-প্রাবন্ধিক সুফিয়া খাতুন। তিনি ২০২১ সালে আত্মজীবনীতে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। আলোচিত ‘জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে’ গ্রন্থের রচয়িতা তিনি। জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালে ময়মনসিংহে। এ লেখকের ‘সোনা ঝরা দিন’ শিরোনামের শিশু-কিশোরদের জন্য রচিত গ্রন্থটিও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া তিনি লিখেছেন কাব্যগ্রন্থ ‘আপন ভুবন’, ‘নারীর চোখে জল’, ভ্রমণকাহিনী ‘প্রবাসের প্রাপ্তি’ প্রভৃতি।
পান্না কায়সার কথাসাহিত্যিক ও অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ৭৩ বছর বয়সে মারা যান গত ৪ আগস্ট। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় ভূমিকার স্বীকৃতি হিসাবে ২০২১ সালে মর্যাদাপূর্ণ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন পান্না কায়সার। তার গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-মুক্তিযুদ্ধ: আগে ও পরে, নীলিমায় নীল, হৃদয়ে বাংলাদেশ, অন্য কোনোখানে, তুমি কি কেবলি ছবি, রাসেলের যুদ্ধযাত্রা, সুখ, না চুনি না পান্না প্রভৃতি।
সুবিমল মিশ্র ছোটগল্পকার ও ঔপন্যাসিক সুবিমল মিশ্র ৮০ বছর বয়সে সারা যান গত ৮ ফেব্রুয়ারি। কলকাতায় জন্ম তার। তার ৫০ বছরের সাহিত্যজীবনে কোনোদিন কোনো বাণিজ্যিক পত্রিকায় একটি অক্ষরও লেখেননি। অধিকাংশ বই-ই নিজ দায়িত্বে সম্পাদনা, প্রকাশ ও বিক্রি করেছেন ব্যতিক্রমী এ সাহিত্যিক। ১৯৬৭ সালে তার লেখা ‘হারান মাঝির বিধবা বৌয়ের মড়া অথবা সোনার গান্ধীমূর্তি’ ছোটগল্পটি বাংলা সাহিত্য জগতে প্রথম আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
তার লেখা অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে-তেজস্ক্রিয় আবর্জনা, আসলে এটি রামায়ণ চামারের গল্প হয়ে উঠতে পারত, হাড়মটমটি, নাঙা হাড় জেগে উঠেছে, কণ্ঠপালক গুঁড়া, রঙ যখন সতর্কীকরণ চিহ্ন, ওয়ান পাইস ফাদার মাদার, চেটে চুষে চিবিয়ে গিলে প্রভৃতি।
মলয় রায়চৌধুরী ভারতের বিহারের পাটনায় ১৯৩৯ সালের ২৯ অক্টোবর জন্ম নেওয়া ‘হাংরি জেনারেশন’ সাহিত্য আন্দোলনের জন্য খ্যাত মলয় রায়চৌধুরী ৮৪ বছর বয়সে মারা যান গত ২৬ অক্টোবর। তিনি ছিলেন কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক ও সাংবাদিক। ১৯৬৪ সালে ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতার জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় জেল খেটেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন মলয় রায়। তার রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস, ভেন্নগল্প, জলাঞ্জলি, নামগন্ধ, এই অধম ওই অধম, শয়তানের মুখ, জখম, হাততালি, চিৎকারসমগ্র, ছত্রখান, মার্কসবাদের উত্তরাধিকার প্রভৃতি।
ইকবাল হাসান
বাংলা একাডেমির সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ইকবাল হাসান গত ১২ এপ্রিল কানাডার টরন্টোর মাইকেল গ্যারন হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন । তার বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর।এ কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে-অসামান্য ব্যবধান, জোছনার চিত্রকলা, কপাটবিহীন ঘর, দূর কোনো নক্ষত্রের দিকে, দূরের মানুষ কাছের মানুষ, আলো আঁধারে কয়েকটি সোনালি মাছ, চোখ ভেসে যায় জলে, সুখলালের স্বপ্ন ও তৃতীয় চরিত্র, কিছু কথা কথার ভেতরে প্রভৃতি।
এছাড়া গত ২৫ জুলাই ভাষাবিজ্ঞানি ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ মারা যান।