ক্যাম্পাস

যবিপ্রবির বাসে যাত্রী তুলে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তা শাহেদ রেজার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে যাত্রী তুলে ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারেক মাহমুদ (পিয়াস) নামের এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা যবিপ্রবি উপাচার্য বরাবর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য।

অভিযোগে পত্রে তারেক বলেন,  আমি একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত আছি। চাকরি সূত্রে আমার ঢাকাতে থাকা হয়। গত ২১ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) অফিস শেষে আমি যশোরের উদ্দেশ্যে রওনা হই। যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড় পাড় স্টপেজে পৌঁছালে দেখতে পাই, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একটি বাস। বাস থেকে "নড়াইল-যশোর, নড়াইল-যশোর" বলে যাত্রী ডাকা হচ্ছে। আমি ভাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে, রেজা নামের এক কর্মকর্তা আমাকে বলেন- "পরে দেখা যাবে আগে ওঠেন"। আমি ও আমার এক সহকর্মীসহ বাসে উঠি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ৩০-৩৫ যখন যাত্রী নিয়ে যাত্রাবাড়ী ধোলাইপাড় ছেড়ে যায় বাসটি। এরপর প্রত্যাশা পর্যন্ত প্রত্যেকটা স্টপেজে দাঁড়িয়ে ডেকে ডেকে যাত্রী নেয় রেজা নামে ওই কর্মকর্তা। পদ্মা সেতুতে উঠার সময় বাসের যাত্রী ছিলো পরিপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, ইমরান নামের এক স্টাফ যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া উঠানো শুরু করে। আমাদের কাছ থেকে আদায় করার সময় আমরা দুইজন ৩০০ করে ৬০০ টাকা ভাড়া দিলে রেজা সাহেব অস্বীকৃতি জানান। উনি আমাদেরকে বলেন, নরমাল ভাড়া ৬৫০ টাকা। তাকে আরও ৫০০ টাকা দেওয়া লাগবে। কথাবার্তার একপর্যায়ে উনি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। আমি নিজের সম্মান রক্ষার্থে আমি তখন তাকে আরো ৪০০ টাকাসহ মোট ১০০০ টাকা ভাড়া দিই।

আমি আমার পরিচয় দিয়ে তার নাম জানতে চাই। উনি নাম না বলে আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং বলেন, "কার কাছে নালিশ দিবি?"এরপর ড্রাইভারকে বলেন বাস থেকে নামিয়ে দিতে। আমি তার সঙ্গে একমত হয়ে বলি- "ঠিক আছে আমাকে ভাঙা নামিয়ে দিবেন।" কিন্তু নামায় দেওয়ার সময় তিনি আমাদের থেকে নেওয়া ভাড়া ফেরত দিবেন না। পুরো টাকাটাই রেখে দিবেন। এরপর যথারীতি ভাঙ্গা, মোকসেদপুর, ভাটিয়াপাড়া, নড়াইল প্রত্যেকটা স্টপেজে দাঁড়িয়ে ডাক দিয়ে যাত্রী সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। মোট ৪০ থেকে ৫০ জন যাত্রী পরিবহন করে নিয়ে আসেন। সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে ব্যবসা এবং নিজের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সাধারণ জনগণের শারীরিক লাঞ্ছিত করায় ইঞ্জিনিয়ার রেজা এবং মেকানিক ইমরানের সুষ্ঠু বিচার দাবী করছি।

এ বিষয়ে শাহেদ রেজা বলেন, ধোলাইপাড় থেকে আমার নিজের আপন বড়ভাই ও তার ছেলেমেয়েকে  বাসে  নেওয়ার জন্য আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় তারা দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। এরপর আমি তাদের বাসে তুলি। তাদের বাসে ওঠার সময় স্ট্যান্ডের লোকজন ঝামেলা করে ২০০ টাকা দাবি করে। তাদের কাছে ভাংতি টাকা নেই বলে আমাকে টাকা দিতে বলেন। আমি তাদের হয়ে ২০০ টাকা দেই স্ট্যান্ডের লোকদের। পরবর্তীতে বাসে উঠার পরে তারা কোন বিভাগের শিক্ষক জানতে চাইলে বলেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কেউ না। তাদের বড়ভাই এখানে চাকরি করেন। এরপরে তারা কেন মিথ্যা কথা বললেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে- তারা আমাকে আমার পরিবারের সামনে অপদস্থ করে এবং চোর বাটপার বলে আখ্যায়িত করে। আমি প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিব তার বিষয়ে। যাতে করে এই রকম মিথ্যা পরিচয়ে কাউকে আর বিভ্রান্ত করতে না পারে।

বাসে যাত্রী তোলার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, বাসে ৩০ জনের মত লোক ছিলো। এর মধ্যে বিশ্ববিদালয়ের একজন শিক্ষকের আপন বড়ভাইসহ ৫-৭ জন তাবলীগ থেকে আসছিলেন, তাদের নিয়ে আসছি। এছাড়া আমার পরিবারের সদস্য ও প্রগতির কয়েকজন লোক ছিলো। আমি কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি। আমার নিজের বড়ভাই ও তাবলীগের লোকজন ড্রাইভারদের খুশি হয়ে কিছু টাকা দেয়। কিন্তু আমরা কারও কাছ থেকে টাকা নেইনি।

এ বিষয়ে পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মো. জাফিরুল ইসলামকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।

যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, উক্ত বিষয়ে আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছে, আমি বিষয়টি নথিভুক্ত করার জন্য পরিবহন প্রশাসক ও রেজিস্টার দপ্তরে পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যদি অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তা আসলেই এমন কোন কাজ করে থাকে, তাহলে সেটা অবশ্যই গর্হিত একটি অপরাধ। যদি এমন কোনো কিছুর প্রমাণ আমরা পাই, তাহলে আইনানুসারে তার বিরুদ্ধে বাবস্থা নেওয়া হবে।