আমাদের মোটরবাইকটি কেমন মাইলেজ দিচ্ছে তার জানতে প্রথম পর্বে আমরা বোতল টেস্ট পদ্ধতির কথা বলেছিলাম। কার্বুরেটরে মেজারমেন্ট বোতল যুক্ত করে নির্দিষ্ট পরিমাণ তেলে কত মাইলেজ পাওয়া যায় তার বিস্তারিত ছিল ওই পর্বে।
বেশিরভাগ সার্ভিস সেন্টারেই কিন্ত এই পদ্ধতিতে আপনাকে মাইলেজ টেস্ট করে একটা ভালো রেজাল্ট দেখিয়ে দেয়। কিন্ত বাস্তবে আপনি যখন বাইক চালান তখন সেই তথ্যের মিল খুজে পান না। কেন এমন হয়? তাহলে কি বোতল টেস্ট ভুল পদ্ধতি? না, বোতল টেস্ট ভুল পদ্ধতি নয়। তবে রিয়েলটাইম মাইলেজ রিপোর্ট বোতল টেস্টের মাধ্যমে না পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কেবলমাত্র ফাঁকা হাইওয়েতে টপ গিয়ারে যেই মাইলেজ পাবেন তার সঙ্গেই বোতল টেস্টের রেজাল্টের সামঞ্জস্য পাবেন।
আসুন, আজ জেনে নেই ঠিক কী কী কারণে বোতল টেস্টে পাওয়া মাইলেজ বাস্তবে পাওয়া মাইলেজের সাথে মিলে না। একইসঙ্গে আমরা মাইলেজ সঠিকভাবে কিভাবে মাপা যায় সেই পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা করব।
বোতলে ১০০ মিলিলিটার তেল নিয়ে টেকনিশিয়ান যখন মাইলেজ মাপতে যায় তখন কার্বুরেটরে জমে থাকা তেলটুকু কিন্তু ফেলে দেয় না। এর ফলে সেই জমে থাকা তেলটুকুও বাড়তি মাইলেজ যোগ করে। এছাড়া টেকনিশিয়ান টপ গিয়ারে ইকোনমি মুডে ফাঁকা রাস্তায় বাইক চালিয়ে টেস্ট করার কারণে সর্বোচ্চ মাইলেজটাই আসে। অথচ বাস্তবে আপনি যানজনের রাস্তায় অসংখ্যবার গিয়ার পরিবর্তন করেন, ব্রেক করেন, সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং একেক সময় একেক রকম থ্রটলে বাইক চালান। শেষ ফলাফল হিসেবে আপনার পাওয়া মাইলেজ এবং সেই টেকনিশিয়ানের দেওয়া মাইলেজে গড়মিল থাকে ব্যাপক।
এবার আসুন জেনেই নেই রিয়েলটাইম মাইলেজ টেস্টের দুইটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কার্বুরেটর কিংবা এফআই, যেকোনো ধরনের বাইকের রিয়েলটাইম মাইলেজ আপনি জানতে পারবেন।
ফুল ট্যাংক পদ্ধতি
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এই পদ্ধতিতে ট্যাংক ফুল করে মাইলেজ মাপতে হবে। অর্থাৎ প্রথমে ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ট্যাংকের নেক বা গলা পর্যন্ত ফুয়েল নিন। ট্রিপ মিটার জিরো করুন। এবার বিভিন্ন ট্রাফিক কন্ডিশনে ১০০ বা ২০০ কিলোমিটার চালান। আবার পাম্পে গিয়ে ট্যাংকের গলা পর্যন্ত তেল রিফিল করুন। এবার হিসাব করুন কত কিলোমিটার চলতে কত লিটার তেল লাগল, তাহলেই বেরিয়ে আসবে আপনার বাইক কেমন মাইলেজ দিচ্ছে।
রিজার্ভ ফিলিং পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে যখনই আপনার বাইক রিজার্ভে আসবে তখন মিটারের রিডিংটা লিখে রাখুন এবং ২ বা ৩ লিটার তেল নিন। মিটার জিরো করে চালাতে থাকুন এবং আবার যখন রিজার্ভে আসবে তখন রিডিংটা নোট করুন। এবার হিসাব করে বের করে নিন মাইলেজ কত পেলেন। এফআই ইঞ্জিনে যেহেতু তেলের চাবি থাকে না তাই মিটারে ‘F’ লেখা দেখলেই বুঝে নেবেন রিজার্ভে পৌছে গেছেন।
উপরোক্ত দুটি পদ্ধতির মধ্যে ফুল ট্যাংক পদ্ধতিই রিয়েলটাইম মাইলেজ মাপার ক্ষেত্রে সেরা। এছাড়া ফুয়েল ট্র্যাকার বা ফুয়েল লগ নামে কিছু অ্যাপ রয়েছে, যেগুলো দিয়ে মাইলেজের হিসাব রাখা বেশ সুবিধাজনক।
যদি কোম্পানির দাবি করা মাইলেজ থেকে রাস্তা ভেদে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার কম বেশি পান তাহলে দুশ্চিন্তার তেমন কিছু নেই। কিন্ত যদি দেখেন মাইলেজ অর্ধেকের আশেপাশে নেমে গেছে তাহলে অবশ্যই তা মহাচিন্তার বিষয়। বুঝে নেবেন আপনার বাইকের চেক আপ এবং সমস্যা খুঁজে বের করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মাইলেজ বিভিন্ন কারণেই কমতে পারে। যদি মাইলেজ বেশি-ই কমে গেছে বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে-
✅ বাইকের টায়ার প্রেশার ঠিক আছে কিনা? ✅ চেইন এডজাস্টমেন্ট প্রপার আছে কিনা? ✅ এয়ার ফিল্টার নোংরা বা ক্লগড কিনা? ✅ স্পার্ক প্লাগ দুর্বল কিনা? ✅ সঠিক গ্রেডের ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করছেন কিনা? ✅ চাকা জ্যাম আছে কিনা? ✅ তেলে ভেজাল আছে কিনা?
এই বিষয়গুলো পরীক্ষা করবেন।
পোস্টটি হেল্পফুল মনে হলে শেয়ার করুন এবং পেইজটি ফলো করুন। হ্যাপি বাইকিং।
লেখক: অ্যাডমিন, Bike Doctor BD