বরগুনা-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য তার পক্ষে নারী ভোটারদের টাকা দেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমতলী পৌরসভার প্যানেল মেয়রের টাকা বিতরণের ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া তিন মিনিট ৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আমতলী উপজেলার নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয়ে ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান নারীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে টাকা বিতরণ করছেন। তার পেছনেই রয়েছে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনি ব্যানার। এ সময় সেখানে আরেকজন নারী কাউন্সিলরও উপস্থিত ছিলেন। টাকা বিতরণের এক পর্যায়ে ‘নৌকা’ বলে শ্লোগান দেয় নেতাকর্মীরা। তবে টাকা বিতরণকে ‘সমাবেশের জন্য না, দান’ বলে দাবি করেছেন ওই কাউন্সিলর। তবে, এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটি।
নাম গোপন রাখার শর্তে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় চাওড়া ইউনিয়নে আ.লীগ প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রচারণা সমাবেশকে সামনে রেখে সেখানে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আমতলীর পৌর মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসভবনের নিচে উপজেলা আওয়ামী লীগের নৌকার প্রচার কার্যালয়ে ডেকে শতাধিক নারীকে নগদ টাকা বিতরণ করা হয়। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে টাকা বিতরণ করেন পৌর কাউন্সিলর ও আমতলী পৌর সভার প্যানেল মেয়র হাবিবুর রহমান। এ সময় টাকা বিতরণের প্রমাণ রাখার জন্য সকলের ভিডিও ধারণ করে রাখা হয়।
সভায় উপস্থিত থেকে টাকা নিয়েছেন এমন কয়েকজন নারী পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুক্রবার চাওড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রচার সভায় মিছিল নিয়ে উপস্থিত থাকতে তাদের টাকা দেওয়া হয়েছিল। কয়েকজন নারী অভিযোগ করে বলেন, এ সময় ছবি তুলতে না চাইলেও তারা টাকা বিতরণের ছবি তুলে রাখেন, যাতে আমরা অন্য কারও প্রচার সভা কিংবা মিছিলে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
বরগুনা-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম ছরোয়ার ফোরকান বলেন, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর জনসভায় নারী ভোটারদের টাকার বিনিময়ে উপস্থিত করানো হয়। মূলত, জনপ্রিয়তা হারিয়ে তারা এখন কালো টাকার খেলা শুরু করেছে। স্থানীয় আ.লীগের নেতাকর্মীরা ভোটারদের হুমকি দিচ্ছে। টাকা বিতরণ করছেন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে জানানো হবে।
এ বিষয়ে পৌর কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান বলেন, আমি ব্যক্তিগত অর্থ থেকে গরিবদের মধ্যে টাকা বিতরণ করেছি। নৌকার সমাবেশে কিংবা ভোট দেওয়ার জন্য বিতরণ করিনি। নির্বাচন চলাকালে নৌকার কার্যালয়ে ভোটারদের ডেকে এনে নৌকার প্রচারণা চালিয়ে টাকা দেওয়ার বিষয়টি আচরণবিধির লঙ্ঘন তিনি জানেন কি না জানতে চাইলে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুল আলম রাইজিংবিডিকে বলেন, ভিডিওটি নজরে এসেছে। ইসির নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি তদন্ত করছেন।
এ বিষয়ে বরগুনার রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ভিডিও হাতে পেয়েছি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।