আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও পাঁচবারের সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী। হজ ও তাবলিগ জামাত নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারানো এই রাজনৈতিক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ভোটারদের মন জয়ের জন্য সংসদীয় এই আসনের দুটি পৌরসভা ও ১৩টি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন তিনি।
নির্বাচনের মাঠে লতিফ সিদ্দিকীর প্রধান প্রতিপক্ষ তারই রাজনৈতিক শিষ্য কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়া ও দল থেকে বহিষ্কারের পর সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর প্রায় পাঁচ বছর নিষ্ক্রিয় ছিলেন রাজনীতির মাঠে। এলাকায় এলেও পরিবার ছাড়া বাইরের কারও সঙ্গে মেলামেশা করেননি। যাদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় রাজনীতির ময়দানে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, তারাও তার বিতর্কিত কাণ্ডে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। বিরোধী পক্ষের লোকজন এসব ফলাও করে প্রচার করে ফায়দাও লুটেছে। বলা যায়, চারদিক থেকে কোণঠাসাই হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ, সভা, মতবিনিময় ও উঠান বৈঠক করছেন।
শীতের সকালে নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যস্ত লতিফ সিদ্দিকী
মোজহারুল ইসলাম বলেন, ‘কালিহাতীতে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকাকে বিজয়ী করতে হবে। এমন কাউকে মানুষ নিশ্চয় ভোট দেবে না, যাকে সুখে-দুখে পাশে পাওয়া যায় না। ফলে কালিহাতীতে নৌকার কোনো বিকল্প নেই। লতিফ সিদ্দিকী নৌকার সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তিনি নৌকার ধারে কাছে আসতে পারবেন না। কালিহাতীর মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে। আমি বিজয়ী হলে কালিহাতীকে মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করবো। কালিহাতীকে স্মার্ট উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলব।’
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা ৩২ বার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ঠান্ডু। এছাড়া তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
সাবেক পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মন্ত্রিত্ব পান। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ওই বছরই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে একটি সভায় হজ ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব হারান তিনি। আওয়ামী লীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয় তাকে। দেশে ফেরার পর যেতে হয় কারাগারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। নির্বাচনি প্রচারণার সময় তার গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে টানা সাত দিন অবস্থান ধর্মঘট করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এ ঘটনার পর থেকে কালিহাতীর রাজনীতি থেকে তিনি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে লতিফ সিদ্দিকী আড়ালবাস ভেঙে জনসমক্ষে এসেছেন। হারানো জায়গা ফিরে পেতে নির্বাচনের মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন।
বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগকালে তিনি কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষের ভালোবাসাই তাকে বিজয়ী করবে। নির্বাচনে তিনি কোনোদিন দাঙ্গা-হাঙ্গামা বরদাশত করেননি, এখনো করবেন না। জাল ভোট, পেশিশক্তির ব্যবহার করে কেন্দ্র দখল ও অর্থ দিয়ে ভোটার প্রলুব্ধ করে ভোট আদায় ইত্যাদি অপকৌশলকে তিনি ঘৃণা করেন।
ট্রাক প্রতীক নিয়ে এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়া আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘নির্বাচনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিত করা। ভোটারদের কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে যাতায়াত ও নিরাপত্তার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে হবে। জাল-জালিয়াতি, অর্থের প্রলোভন কিংবা পেশিশক্তির বাহাদুরি নয়, ভোটাররা নির্বঘ্নে ও স্বাধীনভাবে ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাস ধরে কালিহাতীর মানুষের ভালোবাসার আওয়াজটা জানার চেষ্টা করেছি। মানুষের ভালোবাসা পুঁজি করে নির্বাচনে এসেছি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। নির্বাচনে মানুষের ভালোবাসাই আমাকে বিজয়ী করবে।’
টাঙ্গাইল-৪ আসনে ভোটের মাঠে আরও আছেন স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠক ও সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত শাজাহান সিরাজের মেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা, জাতীয় পার্টির ইঞ্জিনিয়ার লিয়াকত আলী, জাতীয় পার্টির সাদেক সিদ্দিকী, জাকের পার্টির মোন্তাজ আলী, তৃণমূল বিএনপির শহিদুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির শুকুর মামুদ।
সংসদীয় এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫৫৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৮৯২ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ৭৫ হাজার ৬৬২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ২ জন।