হরতাল শব্দটি গুজরাটি (হ্যড়্তাল্) থেকে এসেছে। এই শব্দের প্রথম ব্যবহার করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে হরতাল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করা হয়। এটা হচ্ছে সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের সম্মিলিত আন্দোলন। শুরু থেকেই হরতালের সময় সব কর্মক্ষেত্র, দোকান, আদালত বন্ধ থাকে। তবে সাধারণত অ্যাম্বুলেন্স, দমকলবাহিনী, গণমাধ্যমসমূহ এর আওতার বাইরে হয়ে থাকে।
এটা সাধারণত কোনো একটা দাবি আদায় করার বা এর গুরুত্ব বোঝাতে আহ্বান করা হয়। সরকারি দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে হরতাল ডাকা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকার সমর্থিত নয়, এমন সংগঠন, কিংবা বিরোধী দল হরতালের আহ্বান করে। তবে অরাজনৈতিক কোনো দলও, সরকার-সমর্থিত হওয়াসত্ত্বেয় সরকারের কোনো কাজের বিরোধিতা করতে হরতালের ডাক দিতে পারে।
ভারতীয় উপমহাদেশেই এই রাজনৈতিক হাতিয়ারটির ব্যবহার বেশি হয়। বৈশ্বিক ইতিহাসে প্রথম দিকে রেকর্ড করা হরতাল অ্যাকশনটি ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১১৭০ সালের দিকে।
সে সময় দাইর আল মদিনা যেটি বর্তমান মিশর সেখানকার মন্দিরের কর্মীরা তাদের দাবি আদায়ে প্রথম স্ট্রাইক বা হরতাল পালন করে।
ষোড়শ শতাব্দীতে স্ট্রাইক হয় ইংল্যান্ডে। পরবর্তী সপ্তদশ শতাব্দীতে এটি জনপ্রিয়তা পায়। পরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দাবি আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে হরতাল।
আঠারো ও উনিশ শতকে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই নিয়মিতভাবে পালিত হয় হরতাল। আর বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে এমন কোনো বছর ছিল না যে যখন কোনো হরতাল পালিত হয়নি।
দেশ যেমনই হোক উন্নত, উন্নয়নশীল কিংবা অনুন্নত কম বেশি হরতাল পালন করে। এসব হরতাল পালন করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন; তবে এতে বেশি অবদান ছিল রাজনৈতিক দলগুলোরেই।
ভারতীয় উপমহাদেশে রংপুরের প্রজা সমাজ ১৭৮৩ সনে ইজারাদার দেবী সিংহের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ডিং বা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সে সময় ডিং ছিল দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত খাজনা দেয়া বন্ধ রাখার আন্দোলন। এই আন্দোলনে প্রজারা সরকারের বিরুদ্ধে নয়, বিদ্রোহ প্রকাশ করেছিল সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
রংপুরের প্রজাদের এই ডিং আন্দোলনের আদলে পরবর্তী সময়ে যশোহর-নদীয়া-পাবনার নীলচাষীদের ডঙ্কা আন্দোলন গড়ে ওঠে। ১৮৫৯-৬০ সনের এই আন্দোলনে বাংলার নীল চাষিরা ডঙ্কা বাজিয়ে ঘোষণা দেয় যে, তারা আর নীল চাষ করবে না। একটি ডঙ্কার আওয়াজ শোনামাত্র দূরে আরেকটি ডঙ্কা বাজানো মানে ছিল সেখানেও ওই আন্দোলনের শরিকরা সংহতি ঘোষণা করছে।
এই একই প্রক্রিয়ায় ১৮৫০ ও ১৮৬০-এর দশকে ফরায়জি আন্দোলনের কৌশল ছিল জোট। জমিদার কর্তৃক বেআইনি ও অন্যায়ভাবে আরোপিত আবওয়াব (খাজনাতিরিক্ত চাঁদা) আদায়ের বিরুদ্ধে প্রজারা জোট গঠন করে। এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। প্রতি পরগণায় কৃষকদের নিয়ে জোট গঠন করা হয়। স্থানীয় জোটগুলো সংশ্লিষ্ট হয় আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে। আঞ্চলিক জোট সমন্বয়ে গঠিত হয় কেন্দ্রীয় জোট।
১৮৭৩ সালের পাবনা কৃষক বিদ্রোহ সংগঠকরা যে আন্দোলন পরিচালনা করে তা ছিল আজকের ধর্মঘটের মতোই।