যে তিনজন ফুটবলার একই সঙ্গে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন, তাঁদের একজন ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার। ১৯৭৪ সালে খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপ শিরোপা জেতেন বেকেনবাওয়ার। এরপর ১৯৯০ সালে তার কোচিংয়ে ফের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় জার্মানি।
বিশ্ব ফুটবল হারাল এই নক্ষত্রকে। জীবনের ডিফেন্স ভেঙে ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার পা বাড়ালেন পরকালে। জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার দীর্ঘ দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছিল।
অসুস্থতায় হয়েছে তার অন্তিম যাত্রা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।
মাঠে তার দাপুটে উপস্থিতির জন্য নিজ দেশের ভক্ত-সমর্থকরা তাকে ডাকতেন কাইজার নামে। যার অর্থ সম্রাট।
এক বিবৃতিতে তার পরিবার জানিয়েছে, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে জানানো হচ্ছে যে, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার রোববার রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবার সেই সময় পাশেই ছিল। আশা করি সবাই তাঁর পরিবারের এই কঠিন সময়ে পাশে থাকবেন।’
জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব পর্যায়েও অসামান্য সফলতা বেকেনবাওয়ারের। জার্মানির হয়ে তিনি সব মিলিয়ে খেলেছেন ১০৪ ম্যাচ। গোল করেছিলে ১৪টি। এ ছাড়া বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে ১৯৭০ এর দশকে হ্যাটট্রিক ইউরোপিয়ান কাপও জিতেছেন। যা এখন উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নামে চলছে। বায়ার্নের জার্সিতে ৫৮৪ ম্যাচে গোল করেছেন ৭৫টি।
সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডারদের একজন হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছেন বেকেনবাওয়ার। পেলে, দিয়াগো ম্যারাডোনা, গারিঞ্চা; তাঁদের সঙ্গে এক তালে উঠে বেকেনবাওয়ারের নাম। মাঝ মাঠ ও রক্ষণের মধ্যে অপূর্ব সমন্বয় করে গেছেন জার্মানির এই ফুটবলার। বলের উপর যেভাবে দখল রাখতে পারতেন কিংবা বিপক্ষের থেকে বল কেড়ে নেওয়ার যে প্রতিভা ছিল, তা আজও ফুটবল বিশ্বের কাছে শিক্ষণীয়।
১৯৯৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপ অল-টাইম টিম, ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড-টিম অব টুয়েন্টিথ সেঞ্চুরি, ২০০২ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ড্রিম টিমসহ পেয়েছেন অনেক অ্যাওয়ার্ড। যে কয়টি বিশ্বকাপ খেলেছেন তার সবকয়টির টিম অব দ্য টুর্নামেন্টে জায়গা পেয়েছেন।
এছাড়া ১৯৮২ সালে বাভারিয়ান অর্ডার অফ মেরিট, ১৯৮৬ সালে ক্রস অফ দ্য মেরিট অফ ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানি, ২০০৪ সালে অনারারি ডক্টর অফ ন্যাশনাল স্পোর্টস অ্যাকাডেমি এবং ২০০৬ সালে কমান্ডার’স ক্রস অফ মেরিট উল্লেখযোগ্য।
খেলা পরবর্তী জীবনে বেকেনবাওয়ারকে অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগেও অভিযুক্ত হতে হয়েছিল। জীবনের এই নেতিবাচক অধ্যায়টুকু বাদ দিলে বেকেনবাওয়ারের বাকি জীবন ছিল অর্জন ও প্রাপ্তির।