হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপরোসিস একটি বড় ধরনের রোগ। শরীরের সব হাড় সমানহারে ক্ষয় হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে না। সাধারণত কবজির হাড়, উরুর হাড় ও মেরুদণ্ডের হাড় সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে। আবার বাহু, কোমর এমনকি পাঁজরের হাড়ও নরম হয়। এমনও দেখা গেছে যে, জোরে হাঁচি দেয়ার কারণেও রোগীর পাঁজরের হাড় ভেঙে গেছে, মেরুদণ্ডের কশেরুকায় ফাটল ধরেছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এই রোগটি থেকে শতভাগ সুস্থ হওয়ার ওষুধ নেই। তবে একে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করা গেলে হাড়ের ক্ষয়ের গতি কমানো সম্ভব। বয়সের হিসেবে পুরুষদের তুলনায় নারীরা আগে অস্টিওপরোসিসে ভোগেন। সাধারণত ৪৫ বছরের আশেপাশের সময়ে হাড় ক্ষয় বেশি হয।
হাড় ক্ষয়ের নানা কারণ:
ডিম্বাশয় অপসারণ করলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি রয়েছে। আবার অনেকের জিনগত বৈশিষ্ট্য, খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রার ওপরেও এই হাড়ের সবলতা নির্ভর করে। যাদের খাবারে কোনো বাছবিচার নেই, স্থূলতায় ভুগছেন, কিংবা অপুষ্টিতে আক্রান্ত, কায়িক শ্রম করেন না কিংবা দীর্ঘমেয়াদী জটিল রোগে আক্রান্ত, তাদেরও হাড় ক্ষয় হয়। আবার পরিবারে অন্য সদস্যের এই রোগ থেকে থাকলে তার পরবর্তী প্রজন্মেও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া অতিরিক্ত ধূমপান, মদপান ও মাদক সেবনের মতো অভ্যাস থাকলে, সেটিও অস্টিওপরোসিসের ঝুঁকি বাড়ানোর কারণ। যেকোন বয়সের ব্যক্তির এই রোগ হতে পারে। যদি ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়, হাইপার থাইরয়েডিজম থাকে কিংবা ডায়াবেটিস ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে উচ্চ-ডোজের স্টেরয়েড ট্যাবলেট গ্রহণ করলেও এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
অস্টিওপরোসিস আছে কিনা সেটা আগে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাড় ভাঙলে বা ফ্র্যাকচার হলেই কেবল বিষয়টি সামনে আসে। প্রাথমিক অবস্থায় এই রোগের কোনো লক্ষণ থাকে না কিন্তু পরিস্থিতি যখন জটিল রূপ নেয় তখন রোগীর শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে।
প্রতিরোধ
অস্টিওপরোসিস প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধের ওপর বেশি জোর দিতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, শারীরিক পরিশ্রম করা বেশ জরুরি। যারা নিয়মিত কায়িক শ্রম করেন বা শরীরচর্চা করেন তাদেরও হাড়ের গঠন মজবুত হয়। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, প্রোটিন, ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খেলে সেই সঙ্গে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খেলে, অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রতিদিন অন্তত ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতেই হবে। ধূমপান ও মদপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে।
সূত্র: বিবিসি