মোটরবাইক রাইড করার পূর্বশর্ত হলো মাথায় হেলমেট পরা। কারণ, মোটরসাইকেল এক্সিডেন্টে মাথায় ইমপ্যাক্ট আসে সবার আগে— এই বিষয়টা মোটামুটি সবাই জানেন। হেলমেট না পরলে পুলিশ মামলা দেয়— এটাও সবার জানা।
অতএব, জানা ঘটনা নিয়ে আলোচনা করার কিছু নেই। তাই আজকে আলোচনা করবো হেলমেটের এমন কিছু ব্যাপার নিয়ে, যেটা অনেকেই জানেন না। তবে, বিষয়গুলো জানা খুবই জরুরি। কারণ, হেলমেটের সাথে জড়িয়ে আছে মহামূল্যবান মাথার সুরক্ষার প্রশ্ন।
অনেকরকম হেলমেটই হয়তো আপনি দেখেছেন। হয়তো ব্যবহারও করেছেন, কিন্তু বাইক কিনতে গেলে যেমন বাইকের সিসি কত, বিএইচপি কত, টর্ক-ফিগার কেমন, ম্যাস ওয়েট কত, গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কেমন; ব্রেকিং ও ব্যালেন্স অনপয়েন্ট কি-না, স্পেশাল কী কী ফিচার আছে, ওয়ারেন্টি, স্পেয়ার অ্যাভেইলেবল কি-না— এসব জেনেশুনে সেম সেগমেন্টের অন্য বাইকের ফিচারের সাথে কম্পেয়ার করেন। ঠিক তেমন করে কিন্তু হেলমেট কেনার ক্ষেত্রেও করা উচিত।
তবে, কোনো এক অজানা কারণে হেলমেট কেনার ক্ষেত্রে এভাবে চিন্তা করা স্মার্ট মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল!
আমার ধারণা, হেলমেট সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং সেফটি নিয়ে প্রপার জ্ঞান না থাকা এই উদাসীনতার কারণ। যারা বাইকার, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভালোমানের ফুলফেস সার্টিফাইড হেলমেটের কোনও বিকল্প নেই। তার আগে জানতে হবে, একটা হেলমেটের কয়টি পার্ট থাকে, সেগুলোর নাম ও কাজ কী। কারণ, হেলমেটের সবগুলো পার্ট একসাথে মিলেই সেফটি এনশিওর করে। তাই স্পেসিফিক এক-দুইটা পার্ট অথবা শুধু কালার গ্রাফিক্স দেখেই হেলমেট কিনে ফেলা উচিত না।
একটা ফুলফেস হেলমেটে মোটামুটি ৮টি মেজর পার্ট থাকে। হেলমেট হাতে নিলে প্রথমেই যে জিনিসটা দেখবেন সেটা হলো—
আউটার শেল: হেলমেটের বাইরের দিকে যে শক্ত খোলস থাকে, এর নামই আউটার শেল। এই আউটার শেলের মান খুব ভালো হওয়া জরুরি। মোটামুটি ৪ ধরনের ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে এই হার্ড শেল তৈরি হয়। যেমন— প্লাস্টিক, কার্বন ফাইবার, পলি কার্বনেট ও ট্রাই কম্পোজিট।
ইপিএস লাইনার: হার্ড শেল এবং কমফোর্ট লাইনারের মাঝখানে স্যান্ডুইচ করা যে পার্টটি থাকে, এর নাম ইপিএস লাইনার। ইপিএস লাইনার যত ভালো হবে শক বা আঘাতের ইমপ্যাক্ট তত বেশি ভালোভাবে এবজর্ভ করতে পারবে।
কমফোর্ট লাইনার বা প্যাডিং: ইপিএস লাইনারের নিচে থাকে ফোম ও কাপড়ের তৈরি কমফোর্ট লাইনার। ডানে বামে থেকে চিকপ্যাড। এই লাইনার ফিটিং ও চিকপ্যাড যত ভালো হবে, হেলমেট ততবেশি কমফোর্টেবল হবে। ভালোমানের হেলমেটের প্যাডিং অবশ্যই রিমুভেবল, ওয়াশেবল এবং এন্টি ব্যাকটেরিয়াল হয়ে থাকে।
এয়ার ভেন্টস: হেলমেটে এয়ার সার্কুলেশনের জন্য ভেন্টস ও এক্সহস্ট থাকে। এই ভেন্টসগুলোর কোয়ান্টিটি বেশি এবং সাইজে বড় হলে এয়ারফ্লো ভালো হবে।
ভাইজর গ্লাস: সামনের উইন্ডশিল্ড হিসেবে কাজ করে ভাইজর গ্লাস। ভালো কোয়ালিটির হেলমেটের ভাইজর কোয়ালিটি ভালো হতেই হবে এবং অপ্টিক্যালি কারেক্ট হবে। স্ক্র্যাচ রেজিস্ট্যান্ট হওয়াও ভালো ভাইজরের বৈশিষ্ট্য।
চিনবার: থুতনির সামনের অংশের প্রোটেকশন দেয় চিনবার। এটাও ফুলফেস হেলমেটের ইম্পরট্যান্ট পার্ট। ভালো হেলমেটের চিনবারের সাথে চিন কার্টেন এটাচ করা থাকে, যা ধুলোবালি আটকায়।
রিটেনশন সিস্টেম: রিটেনশন সিস্টেমে নাইলন স্ট্র্যাপ এবং এক জোড়া ডি-রিং (D-Ring) থাকে। তবে কুইক রিলিজ বাকল (Buckle)-এর ব্যবহারও কম নয়। কিন্তু ডি-রিং সিস্টেম বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
স্পয়লার: বেটার এরোডায়নামিক এনশিওর করার জন্য লেটেস্ট হেলমেটগুলোতে স্পয়লার (Spoiler) অ্যাডেড থাকতে দেখা যায়। যা হেলমেট ইউজিং এক্সপেরিয়েন্সকে আরও বেটার করে।
সবশেষে, যে কোনো হেলমেট কেনার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভব হলে Snell অথবা Sharp রেটিং আছে এমন হেলমেট কিনুন। তবে, বাজেট নিতান্তই কম হলে মিনিমাম ECE 22.6 সার্টিকেশন দেখে নিন।
হ্যাপি বাইকিং...
লেখক: এডমিন, বাইক ডক্টর বিডি।