দেশজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সঙ্গে আছে ঘন কুয়াশা। ভোর ও গভীর রাতে তাপমাত্রা কমে এলে শুরু হয় কুয়াশা বৃষ্টি। আছে কনকনে ঠান্ডা বাতাসও। এমন আবহাওয়া থেকে সহসা মুক্তি মিলছে না বলেই জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গত শনিবার থেকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা রাজধানী। সূর্যের দেখা মেলেনি রোববারও। এর মধ্যে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর উত্তরের হাওয়া শীতের অনুভূতি তীব্র করে তুলেছে। পৌষের শেষভাগে এমন শীত আর কুয়াশাচ্ছন্ন দিন আরও কিছু থাকবে। সপ্তাহের শেষে বৃষ্টির পর পরিস্থিতি সহনীয় হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পড়ুন: সাতক্ষীরায় হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের চার জেলা-রাজশাহী, পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গা ও দিনাজপুরে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে-৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গতকাল রাজধানীতে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য ছিল ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। যে কারণে রাজধানীতে শৈত্যপ্রবাহ না থাকা সত্ত্বেও শীতের অনুভূতি ছিল বেশি।
কনকন ঠান্ডায় রাজধানীতে বিরাজ করছে জবুথবু অবস্থা। মানুষের চলাফেরায় সমস্যা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্করা কাতর হয়ে পড়ছেন শীতে। ঘন কুয়াশার কারণে উত্তরাঞ্চলগামী রাতের ট্রেনগুলোর শিডিউল বিপর্যয় ঘটায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে বিমান চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, গত দুদিন ধরে উত্তরাঞ্চলে ঘন কুয়াশা থাকায় কম গতিতে চলছে রাতের ট্রেন। সেই সঙ্গে বাড়তি নিরাপত্তার কারণে কমলাপুর পৌঁছাতে প্রতিটি ট্রেনেরই কমপক্ষে দুই ঘণ্টার শিডিউল বিপর্যয় চলছে।
পঞ্চগড়ে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। ছবি: আবু নাঈম
ঠান্ডাজনিত রোগী বাড়ছে খুলনা, সাতক্ষীরা, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে শীতজনিত রোগী বাড়ছে। সেখানে সরকারি হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।
রাইজিংবিডির খুলনা প্রতিবেদক নুরুজ্জামান জানিয়েছেন, তীব্র শীতে কাঁপছে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় কয়েকদিনের শীতে জনজীবন স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়েছে।খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সরকারি আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, সারদেশের মতো খুলনা অঞ্চলেও তাপমাত্রা কমছে। শনিবার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরে খুলনাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে । এরকম তাপমাত্রা আরও ২-৩ দিন থাকতে পারে। ১৫ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তবে ২০ জানুয়ারি পর আবার তাপমাত্রা কমবে।
তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাাত্রার এমন অবস্থা আরও কিছুদিন চলবে।
রাইজিংবিডির পঞ্চগড় প্রতিনিধি আবু নাঈম জানিয়েছেন,পঞ্চগড়ে গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। জ্বর, সর্দি, কাঁশি, ডায়েরিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রতিদিন শহরের আধুনিক সদর হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে। হঠাৎ করে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে।হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ও কনসাল্টেন্ট ডা. মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘পঞ্চগড়ে শীতজনিত কারণে ডায়েরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগী বেড়েছে। প্রতিদিনই বহির্বিভাগে ২০০-২৫০ রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে যারা বেশি অসুস্থ, তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে বলা হচ্ছে। তাদের সুস্থ রাখতে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। একইসঙ্গে আমরা তাদের সচেতন করছি।’
রাইজিংবিডির নীলফামারী প্রতিনিধি ইয়াসিন সিথুন জানিয়েছেন, নীলফামারীতে তীব্র শীতে মানুষ জ্বর-সর্দি, ডায়েরিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভিড় করছেন আক্রান্তরা। তাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্করা বেশি।
কুয়াশায় ফসলের ক্ষতি বিভিন্ন জেলার কৃষকরা জানিয়েছেন, বিভিন্ন গ্রামে শীত ও কুয়াশার কারণে ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ফসলের বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখার পাশাপাশি পানি ঢালার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।