মানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়া ফেরি ও যানবাহন উদ্ধারে চলছে ষষ্ঠ দিনের অভিযান। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় প্রতিদিনই অভিযান শুরু করতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তীব্র শীত, অতি কুয়াশা, পানির স্রোত উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার কাজ করছেন ডুবুরিরা।
ঘন কুয়াশায় পানির নিচে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ডুবুরি দলকে অভিযান চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়া ডুবে যাওয়া ফেরির ওই অংশে ১০ কিলোমিটার বেগে পানির স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। উদ্ধারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা নদীর ওই অংশের পানি ঘোলা। ফলে খালি চোখে কোনো কিছু দেখার সুযোগ নেই। এসব প্রতিকূলতার মধ্যে ১০ মিনিটের বেশি পানির নিচে থাকা সম্ভব নয়। তারপরও দমে না গিয়ে ফেরি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন অভিজ্ঞ ডুবুরি দল।
উদ্ধার অভিযানে নৌবাহিনীর ১১ জন, বিআইডব্লিউটিএ’র ৫ জন এবং ফায়ার সার্ভিসের ৬ জন ডুবুরি সম্মিলিতভাবে কাজ করছেন। এর মধ্যে নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞ টিম রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডুবে যাওয়া রজনীগন্ধা ফেরির পিছনের অংশ ৫ থেকে ৬ ফুট মাটির নিচে দেবে গেছে। ফলে পলি জমে ভরাট হয়ে ফেরির ওজন বেড়ে গেছে। ডুবুরিরা গত কয়েক দিনে বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে ওয়্যার রোপগুলো ক্রেনের সঙ্গে সংযোগ করতে সক্ষম হয়েছেন। এখন ক্রেনগুলোর সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে ফেরিটি তোলা যাবে কিনা।
বিআইডব্লিউটিএ’র ডুবুরি নুরুল ইসলাম বলেন, ফেরিটি উল্টো হয়ে ডুবে রয়েছে। ফলে উদ্ধার অভিযান চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ঠান্ডা, স্রোত ও কুয়াশার মধ্যেও ডুবুরি দলের সদস্যরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এটা আমাদের দায়িত্ব।
নৌবাহিনীর পিটি অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নৌবাহিনী সব সময় দেশ ও জাতির কল্যাণে প্রস্তুত থাকে। পাটুরিয়া ঘাটে ডুবে যাওয়া ফেরির ওই অংশে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ডুবুরিরা জীবনের ঝুঁকি নয়ে কাজ করছেন। বিশ্বের কোথাও এ রকম ঘোলা পানিতে ডুবুরি দল কাজ করে না। তবে নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল সব প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজ করছে।
মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, দুর্ঘটনার দিন থেকে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে কাজ করছে। উদ্ধার কাজের সহায়তায় ৬ জন ডুবুরি নিয়মিত অভিযানে আছে। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের আরো ২৫ জন সদস্য কাজ করছেন।
নৌবাহিনীর ডুবুরি কর্মকর্তা শাহ পরাণ ইমন বলেন, ঘন কুয়াশার মধ্যেও নৌবাহিনীর ডুবুরি দল কাজ করছে। চারটি যানবাহন সনাক্ত করে সেগুলো উদ্ধারকারী জাহাজ দিয়ে তোলা হয়েছে। বাকি যানবাহন সনাক্ত করে নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে ডুবুরি দল কাজ করছে। ফেরিটি ৫০ ফুট পানির নিচে রয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর চেয়ারম্যান আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, এয়ার লিফটিং ব্যাগ দিয়ে ফেরিটিকে ভাসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডুবুরিরা ওয়্যার রোপগুলো পানির নিচে ফেরিতে স্থাপন করেছে। রজনীগন্ধার ওজন ২৫০ টন কিন্তু পলি ও বালু জমে আরো ওজন বেড়েছে।
উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়ের সক্ষমতা ২৫০ টন। হামজা ও রুস্তমের সক্ষমতা ১০০ টনের মতো। তিন জাহাজ মিলে ফেরিটি উদ্ধার করতে সক্ষম হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য গত ১৭ জানুয়ারি ঘন কুয়াশায় নোঙর করা থাকা অবস্থায় নয়টি যানবাহন নিয়ে রজনীগন্ধা ফেরিটি ডুবে যায়। পাঁচ দিনে চারটি যানবাহন উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ হামজা, রুস্তম ও প্রত্যয় একসাথে কাজ করছে। ঝিনাই-১ নামে আরেকটি জাহাজ অভিযানে যোগ দেবে বলে জানা গেছে।