সারা বাংলা

লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সংকটে চুলা জ্বলছে না 

লক্ষ্মীপুরে চলছে তীব্র গ্যাস সংকট। এতে রান্না করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারী গৃহিণীদের। বাধ্য হয়ে অনেকে মাটির চুলোয় রান্না সারছেন, আবারও কেউ বাড়তি খরচ করে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়েছেন। কেউবা বিদ্যুতের চুলা দিয়ে রান্না সারছেন।

সব মিলিয়ে বাসাবাড়ির গৃহিণীদের রান্না করাটা এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনোদিন রান্না করতে না পারলে বাইরে থেকে অতিরিক্ত দাম দিয়ে খাবার কিনতে হচ্ছে অনেককে।

গ্যাসের গ্রাহকদের অভিযোগ, নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গত দেড় মাস ধরে দিনের বেলাতে চুলোয় গ্যাস পাচ্ছেন না। রাতে গ্যাস আসলেও আবারও ভোর না হতে চলে যায়। একই অবস্থা বিরাজ করছে বাণিজ্যিক লাইন এবং সিএনজি গ্যাস স্টেশনেও। গ্যাসের চাপ না থাকায় যানবাহনে সিএনজি গ্যাস ঢুকাতে পারছে না চালকেরা।

এ সংকটের কবে সমাধান হবে, তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

লক্ষ্মীপুর পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাইমা ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। তাই রাতেই রান্না করে রাখি। গত দেড় মাস থেকে আমরা এ সমস্যার মধ্যে আছি।’

একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমি আক্তার বলেন, দিনের বেলাতে গ্যাসের যে পরিমাণ চাপ থাকে, তা দিয়ে কোনো কিছু রান্না করা যায় না।

পৌর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমি বেগম বলেন, দিনে গ্যাস না থাকায় ভোররাতে উঠে রান্না সারতে হচ্ছে।

শহরের উত্তর তেহমুনি এলাকার বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক ফকরুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে। সারা দিনে গ্যাস থাকে না। ভোররাতে রান্নার কাজে সারতে হয়। এ ছাড়া বাড়তি টাকা খরচ করে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে নিয়েছি। দিনের বেলায় সিলিন্ডারে রান্নার কাজ সারতে হচ্ছে।’

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘চুলোয় গ্যাস না থাকায় কেউ কেউ লাড়কি চুলোয় রান্না করছেন, কেউ সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। খাবার রান্না করতে গৃহিণীদের দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। কোনো কারণে যারা রান্না করতে পারে না, তাদের খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।’

সাইফুল ইসলাম নামে একজন গ্রাহক বলেন, ‘নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করি। কিন্তু লাইনে গ্যাস পাওয়া যায় না৷ বাড়তি টাকা খরচ করে সিলিন্ডার ব্যবহার করি।’

চন্দ্রগঞ্জ শাহী সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার রহমত উল্যা সোহাগ বলেন, গ্যাসের চাপ পরিমাণ মতো না থাকায় যানবাহনে ঠিকমতো সিএনজি ভরা যাচ্ছে না। 

লক্ষ্মীপুরের পৌর এলাকা এবং চন্দ্রগঞ্জ এলাকাতে গ্যাস সরবরাহ করে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। আবাসিক এবং বাণিজ্যিক মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার গ্রাহক রয়েছে সংস্থাটির। এর মধ্যে রয়েছে দুটি সিএনজি গ্যাস স্টেশন। স্বাভাবিক নিয়মে গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রতিদিন গড়ে গ্যাসের চাপ ৩০ থেকে ৩৫ পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি পাউন্ড) প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এ মুহুর্তে ২ থেকে ৩ পিএসআই সরবরাহ করা হচ্ছে। যা চাহিদার তুলনায় একেবারে নগণ্য বলে জানিয়েছে বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এসএম জাহিদুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ সুন্দলপুর এবং বেগমগঞ্জের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র থেকে লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়। গত এক মাস ধরে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখন শুধু বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। লক্ষ্মীপুরে যে গ্যাস লাইন এসেছে তা ১৫০ পিএসআই চাপ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন। কিন্তু এ চাপে এ পর্যন্ত কখনও গ্যাস আসেনি। স্বাভাবিক সময়ে ৩০ থেকে ৩৫ পিএসআই চাপে গ্যাস আসত। কিন্তু এ মুহুর্তে ২ থেকে ৩ পিএসআই চাপে গ্যাস আসছে। যা চাহিদার তুলনায় একেবারে কম। এ জন্য গ্রাহকরা গ্যাস কম পাচ্ছে। এছাড়া শীত মৌসুমের কারণেও গ্যাসের চাপ কিছুটা কম থাকে।

গ্যাসের এ সমস্যা কবে নাগাদ সমাধান তা জানাতে পারননি এ কর্মকর্তা।