শীত-কুয়াশা আর মেঘলা আবহাওয়ার সাথে যোগ হয়েছে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। দিনের একটা বড় সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। এমন বৈরী আবহাওয়ার প্রভাব পড়ছে মাগুরার কৃষি কাজে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন কুয়াশার কারণে সরিষা, বোরোর বীজতলা আলু, মুসুরসহ নানা জাতের রবি ফসলে অনিষ্টকারী পোকার আক্রমণ বাড়ে। সেক্ষেত্রে সুপারিশ মতো কীটনাশক ও ছত্রাক নাশক প্রয়োগ করতে হবে।
কৃষকেরা জানান, তীব্র শীত কুয়াশায় মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা কাজে যেতে রাজি হচ্ছেন না। বিশেষ করে বীজতলা থেকে বোরোর চারা সংগ্রহ ও রোপণ অত্যন্ত কঠিন কাজ। কাদা পানি, কুয়াশা ও উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় জনজীবন থমকে গেছে। এই শীতে মাঠে কাজ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
সূত্র জানায়, প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা ঠান্ডা আবহাওয়া সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলাযর বোরো ধান, বীজতলা, ডাল-তেলজাতীয় রবিশস্য, পেয়াজ বীজ, গম, শীতকালীন সবজি ও আলু চাষের ক্ষতি করছে। কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থার মধ্যে কীটপতঙ্গের আক্রমণ ফসলের ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা তাদের।
মহম্মদপুর উপজেলা সদরের শ্যামনগর গ্রামের কৃষক আসগর আলীসহ কয়েকজন কৃষক জানান, ঠান্ডা ও কুয়াশার কারণে বোরো ধানের চারাগুলো হলদে হয়ে গেছে এবং বোরো ধানের বীজতলার প্রায় অর্ধেক ইতোমধ্যেই নষ্ট হয়ে গেছে। আবহাওয়া আরও কয়েকদিন এভাবে থাকলে পুরো বীজতলাই নষ্ট হয়ে যাবে। বীজতলা নষ্ট হয়ে গেলে সঠিক সময়ে বোরো ধান রোপণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।
সদরের জাগলা এলাকার কৃষক শরিফুল ইসলাম জানান, শীত-কুয়াশায় কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এই ঠান্ডায় কেউ কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না। বাড়তি টাকা দিয়েও কাজে আনা যাচ্ছে না। এতে সঠিক সময়ে বোরো ধানের আবাদ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানান গেছে, জেলায় ৩৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষকরা এখন পুরোদমে ব্যস্ত বোরো ধান চাষে । আবহওয়া অনুকূল থাকলে ভালো ফলনের আশা করেছেন তারা। এতে সম্ভাব্য ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৩৩ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন হবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।
জেলার চার উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলায় ১৭ হাজার ১০৫ হেক্টর, শ্রীপরে ১ হাজার ৩২০ হেক্টর, শালিখায় ১২ হাজার ৩৩০ হেক্টর এবং মহম্মদপুর উপজেলায় ৫ হাজার ৩৯৫ হেক্টর জমিতে রোরো ধান চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করেছে জেলা কৃষি বিভাগ। জেলার বিভিন্ন মাঠে বোরো ধানের চাষের জমি প্রস্তুত করে চারা রোপণ কাজ পুরোদমে চলছে। জেলায় ২৭ হাজার ১৯৫ হেক্টর জমিতে বোরা ধানের চাষ করেছেন কৃষক ।
চলতি মৌসুমে জেলায় হাইব্রিড এস এল ৮ এইচ, অ্যারাইজ তেজ, সিনজেনটা ১২০১, অ্যাগ্রো ১২ এরং উফসি ব্রী ৫০, ৫৮, ৬৩, ৮১, ৮৪ ও ৮৮ জাতের ধান চাষ হয়েছে। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সাথে আলোচনাসহ বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
শালিখার আড়পাড়া এলাকার কৃষক গোপাল শীল, মনোজিত বিশ্বাস, আতিয়ার মোল্যা বলেন, আগাম জাতের সরিষা মাঠ থেকে ঘরে তোলা শেষ। চিন্তা এখন ডাল জাতীয় ফসল নিয়ে। মসুর গাছে এখন ফুল আসছে। এসময় শীত-কুয়াশা দীর্ঘ হলে উৎপাদন কমে যেতে পারে।
জেলা কষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, যখন টানা পাঁচ দিন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকে, তখন গাছপালা সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে নিজের খাদ্য তৈরি করতে পারে না, পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। অতিরিক্ত কুয়াশায় আলু ও সরিষা লেটব্লাইট রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে বৃষ্টিতে বোরো ধান ও পেঁয়াজের উপকার হবে।