অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদেরকেই হারিয়ে টেস্টে আলো কেড়ে নিতে পারে এমন স্পর্ধা বিশ্বের খুব কম দলেরই আছে। তাদের একটি যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ হবে সেটা কি আদৌ কেউ স্বপ্নেও ভেবেছিল? সোনালী অতীত হারিয়ে যাওয়া দলটি খুঁজে ফিরছে নিজেদের অস্তিত্ব! আর সেই দলটাই কিনা গ্যাবায় গড়লো ইতিহাস! যার পেছনের নায়ক শামার জোসেফ ভাসছেন কিংবদন্তিদের প্রশংসায়।
সিরিজ শুরুর আগে সোনালি সময়ের ক্যারিবীয় তারকা জেফ ডুজন তো বলেই দিয়েছিলেন, ‘ভেড়ার পালকে কসাইখানায় পাঠানোর সঙ্গেই তুলনা চলে ব্যাপারটার। কোনো দুর্বল দলের বিপক্ষে এমন তরুণ দল পাঠালে ক্ষতি ছিল না। কিন্তু এমন অভিজ্ঞ, প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী একটি দলের বিপক্ষে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা সাতজনকে নিয়ে খুব বেশি কিছু অর্জিত হবে বলে তো মনে হয় না।’
ডুজনকে ভুল প্রমাণিত করে গ্যাবায় ইতিহাস লিখলেন জোসেফ। গায়ানার গহীন জঙ্গলের সেই নাইট গার্ড অস্ট্রেলিয়ার কসাইখানায় গার্ড হয়ে পাহারা দিলেন ক্যারিবীয় ‘ভেড়ার পাল’। পাল্টা আক্রমণে তুলে নিলেন ঐতিহাসিক জয়। খুব বেশি অর্জন না হয়তো, কিন্তু এই অর্জন কিংবদন্তি কার্ল হুপারকে এনে দিয়েছে বিয়ের দিনের আনন্দ!
অর্জনটা কত বড়, তা হয়তো ব্রায়ান লারা-কার্ল হুপারদের প্রতিক্রিয়াতেই স্পষ্ট। গ্যাবায় গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঐতিহাসিক জয়ের পর ফক্স স্পোর্টসের ধারাভাষ্যকক্ষেই কাঁদতে দেখা যায় ব্রায়ান লারাকে। কেঁদেছেন আরেক সাবেক অধিনায়ক কার্ল হুপারও।
জয়ের সময় এবিসি রেডিওর ধারাভাষ্যে ছিলেন হুপার। সেখানে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে ৩২৯টি ম্যাচ খেলা এ অলরাউন্ডার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তার কান্নার ভিডিও। ম্যাচশেষে হুপার তো বলেই দিলেন, ‘শেষ এমন মনে হয়েছিল আমার বিয়ের দিন!’
ধারাভাষ্য কক্ষে বসে কান্নায় বিজয়ের স্বাক্ষী হয়েছেন এর আগে সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়াকে তাদের মাটিতে হারানো ম্যাচের নায়ক লারাও। তার ভাষায়, ‘অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ায় হারাতে ২৭ বছর। তরুণ, অনভিজ্ঞ, হিসাব থেকে বাদ দেওয়া-এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের এক বিশাল দিন। এ দলের সবাইকে অভিনন্দন। কী দারুণ একটা উপলক্ষ!’
এ টেস্টে ধারাভাষ্যে ছিলেন আরেক সাবেক পেসার ইয়ান বিশপ। জয়ের পর চ্যানেল সেভেনে শামার জোসেফকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যিকারের একটা স্বপ্ন পূর্ণ হলো “জোসেফ দ্য ডেলিভারার” আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিংস্টন থেকে জর্জটাউন থেকে গায়ানা—সবখান থেকে অভিবাদন আসবে। এমন গল্পময় ক্যারিয়ারের মাত্র শুরু। তবে ইতিহাসে একে ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো খুব বেশি (গল্প) নেই।’
প্রশংসার সমুদ্রে ভাসা জোসেফও ম্যাচশেষে ফিরিয়ে দিলেন প্রতিদান, ‘ইয়ান বিশপ, কার্ল হুপার ও ব্রায়ান লারার সামনে (এমন) করাটা দুর্দান্ত! অসাধারণ! আমি বলে বোঝাতে পারব না। আস্থা রাখেন, এমন মানুষদের নিজের জীবনে পাওয়া আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দেয়।’