১৩, ১৪, ৮ ও ০। না! ঢাকা শহরের কোনো বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার নয়। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক লিটন দাসের ব্যাটিং স্কোর।
জাতীয় দলের ওপেনারের নামের পাশে এমন স্কোর যা বেমানান, স্রেফ হতশ্রী। গতবার শিরোপা জেতা কুমিল্লা লিটন, মোস্তাফিজ ও তানভীরকে রিটেইন করে। লিটন ও মোস্তাফিজ দুজনই জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটার। অথচ তাদের থেকে এখনও সেরা ক্রিকেট পায়নি কুমিল্লা। রংপুরের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে লিটন খুলতে পারেননি রানের খাতা। তেড়েফুঁড়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন। আর মোস্তাফিজ নিজের শেষ ২ ওভারে ৩৯ রান দিয়ে দলকে এলোমেলো করে দিয়েছেন।
তবে মোস্তাফিজ থেকেও বেশি আলোচনায় লিটন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এই আসরে ছেড়ে দিয়েছিল তাদের পুরনো অধিনায়ক ইমরুল কায়েসকে। তবে ড্রাফটের শেষ মুহূর্তে তাকে পুনরায় দলে ফিরিয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। দলে ফিরালেও অধিনায়কত্বের দায়িত্বে আর ইমরুলকে বহাল রাখেনি কুমিল্লা। লিটনকে দেওয়া হয় দায়িত্ব। যা রীতিমত ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে লিটনের।
দলের পারফরম্যান্স উঠা নামা থাকলেও লিটন রয়ে গেছেন আড়ালে। ব্যাটে রান নেই। মুখে নেই হাসি। বরাবরের মতো আউট হওয়ার ধরণেই যত গণ্ডগোল। আউট তো হচ্ছেন না, মনে হচ্ছে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসছেন। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে প্রথম বলে এগিয়ে এসে ক্যাচ তোলেন আকাশে। বাবর আজমের হাতে ক্যাচ যাওয়ার মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত হয়ে যায় তার গোল্ডেন ডাক।
আগের ম্যাচেও একই কাণ্ড। প্রথম বলে এগিয়ে এসে ইনসাইড এজে চার পান। বেন কাটিংয়ের পরের বলে কাট করে চার হাঁকালেও পরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে এলবিডব্লিউ।
বিপিএল শুরু হয়েছিল চতুরঙ্গর বলে আউট হয়ে। একটু বাড়তি বাউন্স পাওয়া বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন লিটন। দ্বিতীয় ম্যাচে পেসার খালেদ আহমেদের বলে অযথাই স্লগ করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অনে।
লিটনকে অধিনায়ক করার পেছনে কুমিল্লার দাবি ছিল, নতুন কাউকে তারা লাইমলাইটে আনতে চায়। অধিনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু লিটনের ওপর দায়িত্ব চাপিয়ে তাকে রীতিমত বেসামাল করে দিয়েছে কুমিল্লা।
জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব লিটনকে দেওয়া হয়েছিল। তামিম কিংবা সাকিবের অনুপস্থিতিতে লিটনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। কয়েক ম্যাচে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে তার নেতৃত্বে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অধিনায়কত্বের চাপ ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়ে বলে নিজ থেকে সরে দাঁড়ান লিটন। দল চালানোর সব গুণাবলি থাকলেও ‘নেতা’ হয়ে উঠা হয়নি তার। তবে তাকে নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছিলেন কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ‘লিটন অনেকদিন ধরেই কুমিল্লায় খেলছে। লিটনের ক্রিকেট বোঝাপড়া, চিন্তাভাবনা ও জ্ঞান একজন ভালো অধিনায়কের লক্ষণ। এর আগেও অন্য জায়গায় তাকে ভালো পারফর্ম করতে দেখেছি। মাঠে সে একজন ভালো অধিনায়ক এবং আমি মনে করি একজন অধিনায়ক হিসেবে তার ভবিষ্যৎ আছে।’
কোচ শিষ্যর ওপর ভরসা রাখছেন। দেখার বিষয়, লিটন অধিনায়কত্বের ‘বোঝা’ সামলে রানে ফিরতে পারেন কিনা। বিপিএল চলাকালীন অধিনায়কত্ব পরিবর্তনের রেকর্ডও আছে। লিটনের ক্যারিয়ারে এমন কিছু যুক্ত হয় কিনা তা সময়ই বলে দেবে।