কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রাম। এই গ্রামের বাসিন্দারা ইউটিউব চ্যানেল থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। সেই টাকা দিয়ে সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামের সৌন্দর্য্যবর্ধন এবং বিনোদনের জন্য তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন পার্ক। এই পার্কের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে বাঁশ-কাঠ আর খড়ের অবকাঠামো এবং ছায়া-সুনিবিড় পরিবেশ ভ্রমণ প্রিয় মানুষের মন ভুলিয়ে দেবে। ২০১৬ সালের পর থেকে শিমুলিয়া গ্রামটি ‘ইউটিউব ভিলেজ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
২০১৬ সালের দিকে স্থানীয় বাসিন্দা লিটন আলী এবং দেলোয়ার হোসেন নামের দুই যুবক শখের বশে ইউটিউব চ্যানেল খোলেন। স্থানীয়ভাবে ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার রান্না করে গ্রামের সাধারণ মানুষকে খাওয়াতে থাকেন তারা। রান্না থেকে খাওয়ানো পর্যন্ত ভিডিও ধারণ করে ইউটিউবে আপলোড করতে শুরু করেন এই দুই যুবক। এই কাজে এলাকাবাসীর ব্যাপক উৎসাহ এবং ইউটিউবে দর্শকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় নিয়মিতভাবে তারা এই কাজ চালিয়ে যান।
লিটন আলী পেশায় একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী। পড়েছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট)। আর দেলোয়ার হোসেন স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক। ধীরে ধীরে লিটন ও দেলোয়ারের ইউটিউব চ্যানেলের দর্শক এবং আয় দুটোই বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে বিদেশেও জনপ্রিয় হয় তাদের চ্যানেলটি। লিটন-দেলোয়ারের ভিডিও চোখে পড়ে বেষ্ট এভার ফুড রিভিউ শো চ্যানেলের সানি সাইডের। তিনি ২০১৮ সালের শেষের দিকে আসেন শিমুলিয়া গ্রামে। সানি যেদিন আসেন, সেদিন চার হাজার মানুষকে রান্না করে খাওয়ানো হয়। এই দৃশ্য দেখার পর সানি সাইড এই গ্রামকে ‘ইউটিউব ভিলেজ’ নামে আখ্যায়িত করেন।
বর্তমানে গ্রামটিতে বেড়াতে আসেন দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থী। আর এসব দর্শনার্থীর বিনোদনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এই গ্রামের বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি করা হয়েছে ইউটিউব পার্ক। পার্ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও খরচ করা হচ্ছে ইউটিউব চ্যানেলের আয় থেকে।
ইউটিউব পার্কের ভেতরে ঢোকার জন্য ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হবে। প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে রঙিন মাছের ফোয়ারা। এছাড়া, চোখ জুড়াবে বাঁশ, খড় দিয়ে তৈরি গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহন গরুর গাড়ি, রিকশা এবং লেকের মধ্যে তৈরি ভাসমান ঘর। নারকেল আকৃতির ঘর, ভালোবাসার প্রতীক হৃদয় আকৃতির বসার জায়গা, বাঁশ ও খড় দিয়ে ব্যাঙের দৃষ্টিনন্দন ছাতা, ছোট ব্রিজ, পুকুরের মাঝে গোলঘরসহ শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড দর্শনার্থীদের সময়কে রাঙিয়ে তুলবে। লেকের ওপর নির্মিত কাঠের কারুকাজ করা ছোট্ট সেতু যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি সেতু পার হয়ে বন্য পরিবেশের আদলে তৈরি কৃত্রিম ঝরণা আগতদের মন আনন্দিত করে তুলবে। বর্তমানে এই পার্কের যাবতীয় দেখভাল করেন দেলোয়ার হোসেন।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রথমদিকে কোনো পরিকল্পনা ছাড়া শুরু করলেও এখন সবকিছুই গুছিয়ে করা হয়। রান্নার কাজ দেখতে অনেক দূর থেকে লোকজন আসতেন। তখন এখানে কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা ছিল না। দর্শনার্থীরা এখানে এসে বিরক্ত হতেন। তাই দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। এর ফলে, একদিকে যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি দর্শনার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থাও হয়েছে। ভবিষ্যতে এখানে একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণ করে এলাকাবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।
খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, এই উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নে ইউটিউব ভিলেজ নামের একটি গ্রাম রয়েছে। সেখানে আমি গিয়েছি। অনেক দূর দূরান্ত থেকেও এখানে সবাই বেড়াতে আসেন।
কিভাবে আসবেন: বাংলাদেশের যেকোনো জায়গা থেকে বাস অথবা ট্রেনে প্রথমে কুষ্টিয়ায় আসতে হবে। কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়, কেন্দ্রীয় বাস ডিপো অথবা শহরতলির মোল্লাতেঘরিয়া থেকে বাসে অথবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় খোকসা বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। কুষ্টিয়া থেকে খোকসা পর্যন্ত বাসভাড়া ৪০ টাকা।সিএনজি অটোরিকশায় জনপ্রতি ভাড়া দিতে হবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। খোকসা বাসস্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশা বা ভ্যানযোগে যেতে হবে শিমুলিয়ার ইউটিউব পার্কে। এখানে জনপ্রতি ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা।
বর্তমানে খোকসা বা ইউটিউব ভিলেজে রাতে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সন্ধ্যার মধ্যেই দর্শনার্থীদের ফিরতে হবে কুষ্টিয়া শহরে। কুষ্টিয়া শহরে রাতে থাকার হোটেল ও রেস্তোরাঁ পেয়ে যাবেন দর্শনার্থীরা।