শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতার দখল করা খালের জমি উদ্ধারে অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে নড়িয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজের উপস্থিতিতে এক্সকাভেটর মেশিনের সাহায্যে খালের ওপর থাকা মাটির বাঁধসহ বিভিন্ন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযুক্ত আহাম্মেদ জুলহাস মাঝি নড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, নড়িয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া খালটি অন্তত আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের। খালটি পাইকপাড়া এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে সরাসরি পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে খালের অধিকাংশ স্থান দখল করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাটির বাঁধসহ অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলে। এতে পানি সংকটে ওই এলাকায় প্রায় ৬০০ একর ফসলি জমির চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। সম্প্রতি খালটির আরও ১০ শতাংশ জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে বালু ফেলে ভরাট করেন নড়িয়া পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহাম্মেদ জুলহাস মাঝি। বিষয়টি খবর পেয়ে শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) সেখানে খাল উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় খাল দখল করায় অভিযুক্ত জুলহাস মাঝিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য।
শনিবার সকাল থেকে দুটি এক্সকাভেটর মেশিনের সাহায্যে খালের উপর থাকা মাটির বাঁধ অপসারণ কাজ শুরু করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা চুন্নু খলিফা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘এই খালে ছোটবেলা আমরা নৌকা চালিয়েছি, মাছ ধরেছি। কয়েক বছর ধরে খালটি অনেকে দখল করে বাঁধ দিয়েছে। এখন সরকারিভাবে দখলমুক্ত করা হচ্ছে। এতে কৃষি জমির পানি খাল দিয়ে নামতে পারবে, আমাদের ফসলও ভালো হবে।’
নড়িয়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার মল্লিক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘নড়িয়া পৌরসভা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আহাম্মেদ জুলহাস মাঝিসহ স্থানীয় কয়েকজন মিলে সম্প্রতি খাল দখল করে রেখেছিল। উপজেলা প্রশাসন খালটি দখলমুক্ত করছে। খালটি দখলমুক্ত হলে এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে এবং কৃষিতেও বিপ্লব ঘটবে। আমরা স্থানীয়রা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’
তবে এই ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি অভিযুক্ত আহাম্মেদ জুলহাস মাঝি।
নড়িয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. পারভেজ বলেন, ‘খালটির পাইকপাড়া অংশের দেড় একর পরিধির মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি ভূমিখেকোরা দখল করে ভরাট করে ফেলেছিল। আমরা কৃষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে সরকারি খালে উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম শুরু করেছি। এই অভিযানের অংশ হিসেবে আমরা দখলদারদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। পরবর্তীতে দখলদারদের ব্যক্তিগত খরচে স্থানীয় কাউন্সিলর ও আমাদের উপস্থিতিতে খালের ভরাটকৃত অংশ দখলমুক্ত করা হচ্ছে।’
এই খালটি যদি প্রবাহমান করা যায়, তাহলে খালের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্তত ৬০০ একর জমি ফসলি জমিতে পরিণত হবে বলে জানান সহকারী কমিশনার।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শংকর চন্দ্র বৈদ্য মুঠো ফোনে বলেন, পাইকপাড়া খালটি পুনরুদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সরকারি খাল দখল করে কারো স্থাপনা করার সুযোগ নেই। দখল সরাতে অভিযান অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান তিনি।