সারা বাংলা

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নরসিংদীর ছন্দা সিনেমা হল 

জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ, রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, মান্না, চিত্রনায়িকা শাবনুর, পপি, মৌসুমি, শাহনাজ, শাবানা, ববিতা, কবরি— এমন কারো সিনেমা নেই, যা নরসিংদীর ছন্দা সিনেমা হলে প্রকাশিত হয়নি। মানুষ লাইন ধরে টিকিট সংগ্রহ করে হুমড়ি খেয়ে পড়ত এই সিনেমা হলে। কিন্তু কালের বিবর্তনে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার ছন্দা সিনেমা হলে ব্যবসায় ধস নামে। এখন সিনেমা হলটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ। এখানে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হবে।

নরসিংদীর প্রবীণ চলচ্চিত্র প্রযোজক শামসুর রহমান পিন্টু রাইজিংবিডিকে বলেন, দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শিল্প ক্রান্তিকাল পার করছে। ক্রমশঃ নিভে যাচ্ছে দেশের হলগুলোর রূপালী পর্দার আলো। নরসিংদীতে গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ। সর্বশেষ হাসনাবাদের ৯০ দশকের ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘ছন্দা হলে সিনেমা দেখার জন্য কী মানুষ পরিমাণ পাগল ছিল, সেটা নিজ চোখে দেখেছি। কিন্তু আজকে সেই সিনেমা হলটি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কী যে কষ্ট হচ্ছে, বলে প্রকাশ করতে পারব না। ঢিমেতালে নরসিংদীতে টিকে আছে দু-একটি সিনেমা হল। এর মধ্যে নিয়মিত ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে একটিতে।’

শামসুর রহমান পিন্টু আরও বলেন, বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবার হাতে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট থাকায় এখন সিনেমা, নাটকসহ পুরো চিত্তবিনোদন হাতের মুঠোয়, তাই এখন আর সিনেমা হলে যেতে হয় না। মোবাইল ফোনে সব মিলে যায়। সিনেমা হল ভেঙে নির্মাণ করা হচ্ছে মাল্টিকমপ্লেক্স, গুদাম, গ্যারেজ, শপিংমল, কারখানা বা বেসরকারি ক্লিনিক।

নরসিংদীর এক হল মালিক সাদ্দাম হোসেন রাইজিংবিডিটিকে বলেন, এখন নতুন সিনেমা হলে দু-একদিন চলে। কিন্তু ১০-১৫ বছর আগে ভালো মানের সিনেমা হলে তিন থেকে চার সপ্তাহ চলত। দর্শক কমত না। নরসিংদীতে ১৯টি সিনেমা হল ছিল। এখন দু-একটি ব্যতিত সব হল বন্ধ হয়ে গেছে। ছন্দ সিনেমা হলটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সিনেমা হলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারি মোহাম্মদ ইমন খান, আবুল কালাম আজাদ, মোহাম্মদ রবিন জানান, বর্তমানে সিনেমা ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তাদের অবস্থা শোচনীয়। মালিকপক্ষ ঠিকমত বেতন দিতে পারে না। সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ অন্য পেশা বেছে নিচ্ছে। কেউ বেকার হয়ে যাচ্ছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ছন্দা সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুবেল আহমেদ বলেন, দীর্ঘ দিন লোকসান গুনে হলটি চলছিল। মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে। লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে দু-একটি সিনেমা রিলিজ হতো, এখন মাসেও একটি হয় না। পুরাতন সিনেমা দিয়ে হল চলে না। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে তা দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারনেটে বা অন্যান্য মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই হলে তেমন কেউ সিনেমা দেখতে আসে না। নিরুপায় হয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে।