ধর্ষণের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মৌন মিছিল করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে মিছিলটি বের করা হয়। মূল সড়ক দিয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়ে মিছিল শেষ হয়।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ঘটে যাওয়া ধর্ষণের পেছনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। কর্মসূচি শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ধর্ষকের কোনো ভাই-বোন কিংবা পরিবার নেই, তার কোনো সংগঠন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে, সেটির দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রলীগ রাজপথে থাকবে।’
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে একই দাবিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
ধর্ষণের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবারও আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করেছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মানববন্ধন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলমের পদত্যাগসহ চার দফা দাবি জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’-এর ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশ নেন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অন্য তিনটি দাবি হলো, ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, অছাত্রদের হল থেকে দ্রুত বের করা, যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকরিচ্যুত করা।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মনিকা ইয়াসমিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যত ধরনের অপকর্ম ঘটে, তার পেছনে মদদদাতা একটি গোষ্ঠী আছে। যখন তাদের অপকর্ম সামনে আসে তখন ওই বিশেষ গোষ্ঠী দাবি করে অপরাধীর কোনোও দল নেই, অপরাধীর পরিচয় অপরাধী। আজকে আমরা এখানে শুধু এক মোস্তাফিজের শাস্তির জন্য আন্দোলন করছি না। আমরা মোস্তাফিজের মতো আরও যারা মুখোশধারী আছে, আমরা সবার মুখোশ উন্মোচন করতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশের জন্য জাহাঙ্গীরনগর একটা উদাহরণ তৈরি হওয়া উচিত, আমরা দলমত নির্বিশেষে এখানে দাঁড়িয়েছি। বাংলাদেশে এখন গণতন্ত্র নেই, শাসন নেই, অধিকার নেই। দোষ শুধু মোস্তাফিজ-মানিকদের না; দোষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও, যারা এসব মোস্তাফিজ, মানিকদের ব্যবহার করে ভিসির (উপাচার্য) চেয়ারে বসেন। আমি শাসক দলকে বলতে চাই, আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে, কারণ আপনাদের ছাত্র সংগঠনের ছাতার নিচে ধর্ষকরা বেড়ে ওঠে। আর যারা তাদের সাহায্য নিয়ে উপাচার্য হন, তাদের চরিত্র পাল্টাতে হবে। না হলে এই পাল্টানোর সংগ্রাম চলবে।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা বলেন, ‘এ আন্দোলন শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, এটি সারা বাংলাদেশের আন্দোলন। আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই এবং এ নিরাপদ রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের। তারা যদি নিরাপদ না রাখতে পারে তাহলে এটা তাদের ব্যর্থতা। ধর্ষণের মতো ঘটনায় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত, আপনি ক্ষমতাসীন দেখে পার পেয়ে যাবেন তা আর চলবে না।’
দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘আমরা এমন একজন উপাচার্যকে পেয়েছি যিনি নিষ্ক্রিয় ও নির্বিকার। ক্যাম্পাসে যত ঘটনা ঘটে এর প্রেক্ষিতে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি বড়জোর একটা নির্দেশ পাঠান কিন্তু এর কিছুই ঘটে না। আমরা অছাত্রদের বের করার কথা বলেছি, তিনি শুধু নির্দেশ দিয়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছেন। আমরা অভিযুক্তদের সার্টিফিকেট বাতিল চাই, অথচ শুধু স্থগিত করা হয়েছে।’
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক এএসএম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলি ও অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাফরুহী সাত্তার, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।
বিকেলে এই আন্দোলকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’-এর পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।