সারা বাংলা

ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক কারাগারে

প্রতারকচক্রের তৈরি করা মোবাইল অ্যাপ ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’র রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ জহুরা মিলিকে (৩২) কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার আমলী আদালতের বিচারক মো. লিটন হোসেন এ আদেশ দেন।

মামলার বাদী ইউসুফ আলীর আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় বলেন, গোদাগাড়ী থানায় প্রতারণার মামলা দায়ের হওয়ার পর ৩১ জানুয়ারি ফাতেমা তুজ জহুরা ওরফে মিলি আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন। সেদিন আদালতে মামলার বাদী কিংবা বাদীপক্ষের কোনো আইনজীবী ছিলেন না। তাই আদালত আসামি ফাতেমাকে সোমবার পর্যন্ত জামিন দেন। একইসঙ্গে এ দিন বাদীপক্ষের উপস্থিতিতে শুনানি হবে বলেও সেদিন সিদ্ধান্ত দেন আদালত।

সে অনুযায়ী আসামি ফাতেমা এ দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালতে হাজির হন। এসময় তার আইনজীবী একরামুল হক ফাতেমার আবারও জামিনের প্রার্থনা করেন। তবে বাদীপক্ষ এর বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামিপক্ষের জামিনের আবেদন নাকচ করেন এবং আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে পুলিশ তাকে কারাগারে পাঠায়।

আইনজীবী শামীম আখতার হৃদয় বলেন, ‘আসামি ফাতেমা ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট অ্যাপের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ছিলেন। রাজশাহীতে যেখানে যেখানে এই অ্যাপের সেমিনার হয়েছে, সেখানে তিনি সেমিনার পরিচালনা করেছেন। বিভিন্ন স্থানে গিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকাও এনেছেন। আদালত আমাদের বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে আর জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন।’

‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ একটি বিদেশি অ্যাপ জানিয়ে প্রতারকেরা এখানে বিনিয়োগে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এক লাখ টাকা বিনিয়োগে মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল তাদের। এই অ্যাপের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান ছিলেন কারাগারে যাওয়া আসামি ফাতেমার স্বামী মো. ওয়াহেদুজ্জামান সোহাগ (৩৮)।

রাজশাহীর অন্তত শতাধিক নারী-পুরুষ প্রায় ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। সারাদেশে এই অ্যাপে প্রায় ২ হাজার মানুষ বিনিয়োগ করে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা খুইয়েছেন বলে রাজশাহীর ভুক্তভোগীরা বলছেন। এই প্রতারণার বিষয়টি সামনে এলে গত ১৭ জানুয়ারি রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় প্রথম একটি মামলা হয়। এরপর ২৩ জানুয়ারি গোদাগাড়ী থানায় আরেকটি মামলা হয়। এই মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে আসামি ফাতেমাকে।

এই প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীতে এ পর্যন্ত ৯টি মামলা হয়েছে। সব মামলাতেই অন্য আসামিদের সঙ্গে ফাতেমা ও তার স্বামী আসামি হিসেবে আছেন। মামলাগুলো পুলিশ, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।

রাজপাড়া থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়েরের পর রাজশাহী মহানগর পুলিশ আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দিয়েছে। এছাড়া তাদের ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করতেও বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই প্রতারণার ঘটনায় এ পর্যন্ত শুধু ফাতেমাই কারাগারে গেলেন। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছে।