সুনামগঞ্জর তাহিরপুরের মানিগাঁওয়ে রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় শিমুলবাগান। যাদুকাটা নদীর তীর জুড়ে থাকা এই বাগানের গাছগুলোতে ফুটে থাকা শিমুলের লাল পাপড়ি দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এই বাগানে যেমন টকটকে লাল শিমুল রয়েছে, তেমনি হালকা কমলা রঙের ফুলও দুলতে দেখা গেছে বাতাসে। বসন্তের এই সময়ে মাথার ওপরে গাছে ফুটে থাকা ফুল ঝরে পড়ে লালগালিচা হয়ে অতিথিদের স্বাগত জানায় সৌন্দর্যের সম্রাজ্যে। চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ফুলের ওপর দিয়ে হাঁটার সময় মনে হবে স্বর্গীয় লালগালিচা দিয়ে আপনাকে স্বাগত জানানো হচ্ছে।
শিমুলের এই স্বর্গরাজ্যের শুরুটা আজ থেকে ২১ বছর আগে মানিগাঁও গ্রামে। ২০০৩ সালে সবুজ জলের নদী যাদুকাটা তীরে ১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নাল আবেদীন গড়ে তোলেন এই শিমুলবাগান। তিনি বেঁচে না থাকলেও এই বাগানের সৌন্দর্য দেখতে এখন ছুটে আসছেন হাজারো পর্যটক। প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন আগতরা। এখানে ছবি তোলা থেকে শুরু করে নাটক ও গানের মিউজিক ভিডিওর শুটিংও করছেন অনেকেই।
বিস্তীর্ণ বালুচর হেঁটে গিয়ে শিমুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে মুগ্ধ হয়েছেন পর্যটক আনিস আহমেদ। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, শিমুল বাগান দেখতে আজকে চলে আসলাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাগছে দেখে। বাগানে আসতে অনেক পরিশ্রম হয়েছে। কিন্তু, কষ্ট বিফলে যায়নি। একদম মনোরম পরিবেশ। এই রকম সুন্দর জায়গা দেশের মানুষের ঘুরে দেখা উচিত। দেশের বাইরে লাখ লাখ টাকা খরচ না করে দেশের ভেতরের সুন্দর জায়গাগুলো দেখাই উত্তম।
ফাল্গুনের প্রতীক হচ্ছে শিমুল বাগান। এখানে যে লাল ফুল ফুঠছে এটা আসলে বছরের প্রথম ফুল। ফাল্গুনের নিদর্শন হচ্ছে লাল শিমুল ফুল। লাল শিমুলের মতো ভালোবাসা যেনো প্রত্যাক মানুষের হৃদয়ে ফুঠে ওঠে এমনটি প্রত্যাশা করেছেন অপর এক পর্যটক।
সপরিবারে শিমুল বাগান দেখতে আসা নুসরাত জাহান বলেন, শিমুল বাগান যে এতো সুন্দর হয় আমার জানা ছিলো না। অনেক ভালো লাগছে এসে। কিন্তু বাগানের ভেতরে নারীদের জন্য একটা চেইঞ্জিং রুমের ব্যবস্থা করলে আরও ভালো হতো। রাস্তাঘাটে সমস্যা রয়েছে। রাস্তার বেশিরভাগ জায়গা ভাঙা। আসতে অনেক কষ্ট হয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সড়ক মেরামতের করা প্রয়োজন।
সিলেট এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি থেকে বন্ধুর সঙ্গে আসা শেখ তামান্না বলেন, এই শিমুল বাগানে আমি প্রথমবার এসেছি। আমি আজকের দিনটা খুবই উপভোগ করছি।
বাগান মালিক প্রয়াত জয়নাল আবেদীনের ছেলে মোহাম্মদ রাকাব উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, আমার বাবা ২০০৩ সালে প্রথমে ব্যবসার চিন্তাভাবনা নিয়ে শিমুল বাগান গড়ে তোলেন। ২০০৬ সালে বাবা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর আমরা এই বাগানটির দেখভাল করছি। এটি এখন দর্শনীয় স্থান।
তিনি আরও বলেন, এখন বাগানে ফুল ফুটতে শুরু করেছে। পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন। পর্যটকদের দাবি মেনে নিয়ে আমরা এই বছর বাথরুম ও থাকা খাওয়ার জায়গা করবো। রিসোর্টের ব্যবস্থা করছি।