ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৮তম আসরের শেষ সময়ের বেচাকেনা চলছে। হাজার হাজার ক্রেতা-দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত মেলা প্রাঙ্গণ। স্টল মালিক ও আয়োজকরা বলছেন, শেষ সময়ে এসে ক্রেতা-দর্শনার্থী অনেক গুণ বেড়েছে। বিভিন্ন পণ্যে মূল্য ছাড়ের কারণে লাভ কম হলেও বিক্রি বেড়েছে। এতে সন্তুষ্ট তারা।
ছুটির দিন শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ও আজ শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচলে বাণিজ্যমেলা ঘুরে এ দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, শুক্রবার ও শনিবার সকাল থেকে মেলা প্রাঙ্গণে দর্শনার্থী বাড়তে থাকে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায়। সন্ধ্যায় ঢল নামে।
মেলার স্টল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলার শেষ সময়ে এসে ক্রেতা-দর্শনার্থী কয়েকগুণ বেড়েছে। অন্য দিনের তুলনায় শুক্রবার ও শনিবার বিক্রিও বেশি হয়েছে। সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে তারা অপেক্ষায় থাকেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনের জন্য। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমেলা শেষ হবে।
আইয়ুস নামের প্রসাধনী স্টলের বিক্রেতা শ্যামলী সিমা বলেন, ‘শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় দর্শনার্থী বেশি এসেছে। মেলার একেবারে শেষ দিকে তাদের প্রতিটি পণ্যের বিশেষ অফার চলছে। একটি ৫০০ টাকার ফেইস ওয়াস কিনলে একটি ৪০৫ টাকার বডি লোশন ফ্রী দিচ্ছেন।’
রায়হান স্যুট কোম্পানির বিক্রয়কর্মী সাদিক হোসেন জানান, মেলার প্রথম দিকে তাদের যে ব্লেজারের মূল্য ৩৫০০ টাকা ছিল, সেগুলো এখন ১৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তাছাড়া সেসব কটি ১৮০০ টাকা ছিল, সেগুলো ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সঞ্জিত গুহ বলেন, দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ওয়ালটন সব সময় বিভিন্ন ইউনিক প্রোডাক্ট তৈরি করে। মেলায় বিক্রির চেয়ে প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রোডাক্টগুলোর পরিচিতি বাড়ানোর দিকে ওয়াটলন গুরুত্ব দেয়। এবারের মেলায় ওয়ালটনের প্রতিটি পণ্যে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ মূল্য ছাড় দিচ্ছে। মেলার প্রথম দিকের চেয়ে এখন বিক্রি বেড়েছে বলে জানান তিনি।
ফরেন ক্রোকারিজের স্টলে চলছে ৪০ শতাংশ ছাড়। এ বিষয়ে স্টলের বিক্রেতা মিনহাজ বলেন, বেশিরভাগ পণ্যের উপরে ছাড় দেয়া হয়েছে। এ সব পণ্যে ৪০ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে।
নরসিংদীর রায়পুরা থেকে বাণিজ্যমেলায় পরিবার নিয়ে এসেছেন ফারজানা আক্তার। তিনি বলেন, তার ওয়ালটনের স্মার্ট টেলিভিশন পছন্দ হয়েছে। এখানে ১৫ শতাংশ মূল্য ছাড় পাচ্ছেন। একটি চার্জার ফ্যানও পছন্দ হয়েছে। সামনে যেহেতু গরম চলে আসছে, সেটিও কিনে নেবেন। গরমকালে দাম যেতে পারে। এছাড়া তিনি ব্লেজার কিনেছেন, রুটি মেকারও কিনেছেন।
সবাইকে নিয়ে মেলায় ঘুরতে ভালো লাগছে বলে জানান ফারজানা আক্তার।
সোনারগাঁ থেকে বন্ধুদের নিয়ে মেলায় এসেছেন কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিনে বন্ধুদের নিয়ে মেলায় কেনাকাটা করতে চলে এসেছি। অনেক কিছু কিনেছি; ব্লেজার, খেলনা, রান্নার কাজে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম। ওয়ালটনের একটি এসি দেখেছি। শোরুম থেকে যেহেতু মূল্যছাড় পাচ্ছি, দুই টনের এসিটি কিনে নেবো।’
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, ছুটির দিনে অনেক লোক সমাগম হয়েছে। লক্ষাধিক লোক এসেছে। তিনি আশা করেন, শেষ কয়েক দিন আরও লোক-সমাগম বাড়বে।
আয়োজকরা জানিয়েছে, এবারের মেলায় স্টলের সংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫১টি। যা বিগত বছরে ছিল ৩৩১টি। দেশীয় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, হংকং, ইরান, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অংশ নেয়া ব্যবসায়ীরা মেলায় নিজেদের পণ্য বিক্রি করছেন।