মায়া রানী। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার আলগী দক্ষিণ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম চরকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। একটু ভালো থাকার আশায় এবং অবসর সময়কে কাজে লাগাতে তৈরি করেন হোগলা পাতার পাটি। ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে ব্যবসায়ীদের কাছে এই পাটি বিক্রি করছেন তিনি। তেমন খরচ না থাকায় শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম করেই সংসারে বাড়তি অর্থের যোগান দিচ্ছেন এই গৃহবধূ।
শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) চর কৃষ্ণপুর গ্রামে কথা হয় গৃহবধূ মায়া রানীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এই পাটি বানাতে আমাদের মেঘনা নদীর ওপারের চরে যেতে হয় হোগলা পাতা আনতে। এরপর পাতাগুলো সুন্দরভাবে কেটে অবসর সময়ে মাটিতে বিছিয়ে বুনতে হয় পাটি। মাসে গড়ে ২০/২৫টি হোগলা পাটি তৈরি করা যায়।
শিখা নামের অপর গৃহবধূ বলেন, হোগলা পাতা সংগ্রহে কোনো টাকা লাগে না। শুধু চর এলাকায় গিয়ে পাতাগুলো কেটে ট্রলারে করে আনতে যা খরচ হয়। বাকিটা হচ্ছে পরিশ্রম। ঘরের কাজের পাশাপাশি হোগলা বা শীতল পাটি বুনে রাখা হয়। বেপারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা দিয়ে পাটিগুলো কিনে নিয়ে যান।
শ্রী মতি, উজ্জ্বলা নামের দুই গৃহবধূ বলেন, আমাদের এই গ্রামের প্রায় সব বাড়িতেই হোগলার পাটি বানানোর প্রচলন রয়েছে। মূলত হোগলা পাতা সংগ্রহ করতে হয় ঈশানবালা, নীলকমল ও গাজীপুরের জেগে ওঠা চর থেকে। এই কাজে আমাদের স্বামীসহ পরিবারের অন্যরা সহায়তা করেন।
হাইমচরের চরকৃষ্ণপুর এলাকার হোগলা পাটির ক্রেতা লক্ষী নারায়ন ভক্ত, আজিজ বেপারী, কুট্টি বেপারীসহ অন্যরা বলেন, পরিশ্রম করলে স্বল্প পুঁজিতে যে লাভবান হওয়া যায় তার উজ্জল উদাহরণ হলেন এই গৃহবধূরা। আমরা যে দামে হোগলা পাটি গৃহবধূদের কাছ থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিনি তার থেকে ২০/৩০ টাকা বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছি। মূলত এই পাটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলের কাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। যদি এই গৃহবধূদের পাশে প্রশাসন এগিয়ে আসে তাহলে তারা আরও এগিয়ে যেতে পারবেন।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বলেন, চরকৃষ্ণপুরের গৃহবধূদের হোগলা পাতা দিয়ে পাটি তৈরির কাজ করে থাকেন। এই গৃহবধূরাই শুধু নন বরং যেকোনো উদ্যোক্তা আমাদের কাছে আসলে উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।