রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের অগ্নিদগ্ধ এক রোগীর লাশ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে পুকুরে।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে লাশটি ভাসতে দেখে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করেন।
নিজের শরীরে নিজেই আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো নাবিদ ইসলাম অনুভব (১৫) নামের এই কিশোর। তারপর ১৭ দিন ধরে হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলো সে।
নাবিদ দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। তার বাবার নাম খাদেমুল ইসলাম। নাবিদের মায়ের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গেছে। নাবিদ রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় মায়ের সঙ্গেই থাকতো। সে এর আগেও একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলো। একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তার চিকিৎসাও চলছিলো। পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে এমন তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি নাবিদ বাড়িতে নিজেই লাইটার দিয়ে জ্যাকেটে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে সে অগ্নিদদ্ধ হয়। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিলো। ১৭ দিন ধরে সে এখানেই চিকিৎসাধীন ছিলো। হাসপাতালে তার সঙ্গে থাকতেন মা। আজ (সোমবার) সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি শৌচাগারে যান। এরপর ফিরে এসে ছেলেকে শয্যায় পাননি। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তিনি বিষয়টি অবহিত করলে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। এতে দেখা যায়, হাসপাতাল থেকে একাই বের হয়ে যাচ্ছে নাবিদ। এর কিছুক্ষণ পরই হাসপাতাল থেকে কিছুটা দূরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুরে শরীরে ব্যান্ডেজ লাগানো একজন দগ্ধ রোগীর মরদেহ ভেসে থাকার খবর আসে হাসপাতালে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএফএম শামীম আহম্মদ কোন কথা বলতে চাননি। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আফরোজা নাজনীন এখন ভারতে অবস্থান করছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ভারতে যাওয়ার আগে তিনি এই রোগী দেখেছিলেন। একটা অস্ত্রোপচারও করেছিলেন। সেই অস্ত্রোপচার সফল হয়েছিলো।
তিনি বলেন, ‘আগুনে নাবিদের তার গলা, কাঁধ, বুক, মুখমণ্ডল, চোখের পাতা থেকে কান পর্যন্ত এবং শ্বাসনালী পুড়ে গিয়েছিলো। শরীরের ১৬ শতাংশ পুড়ে গভীর ক্ষত হয়েছিলো। শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার কারণে তার সেরে ওঠার সম্ভাবনা ছিলো কম। তবে আমি আশাবাদী ছিলাম। বেঁচে থাকলে আরও কয়েকটা অস্ত্রোপচার লাগতো। হাসপাতাল থেকে সব সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছিলো।’
নগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, পরিবারের ভাষ্যমতে ছেলেটার আত্মহত্যার প্রবণতা ছিলো। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে তার চিকিৎসাও চলছিলো। হাসপাতাল থেকে সে একা বের হয়েছে, এটা সিসি ক্যামেরায় দেখা যাচ্ছে। তবে সে পুকুরে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে নাকি অন্যকিছু ঘটেছে তা পুলিশ নিশ্চিত নয়। এটা তদন্তের পর বলা যাবে।
ওসি জানান, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হবে। তদন্ত শেষে এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।