ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা শেষ করেছেন আবু সুফি আহমেদ (৩০)। চাকরির পেছনে না ঘুরে হয়েছেন কৃষি উদ্যেক্তা। চাষ করছেন জিন সিং, গুলঞ্চ, অর্জুন, মাশরুম, সামুদ্রিক শৈবাল, ছায়া প্রোটিন, সজনে পাতা, বড়ই পাতা ও নিম পাতা। এবার ৫২ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ শুরু করেছেন উচ্চ ফলনশীল বিটরুট। পাশাপাশি নিজেই তৈরি করেছেন ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) নামের একটি কোম্পানি।
নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামে কৃষক আব্দুল গফুরের ছেলে আবু সুফি আহমেদ। তার স্বপ্ন কৃষিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) কোম্পানি খুলে চাষাবাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রি করছেন তিনি। পাশাপাশি বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার ইচ্ছা রয়েছে এই কৃষি উদ্যোক্তার।
আবু সুফি আহমেদ বলেন, আমি পড়ালেখা করেছি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। ছোটবেলা থেকেই আমি কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখি। কৃষির পাশাপাশি গাভি, হাঁস ও পুকুরে মাছ চাষ করছি। নতুন কী চাষাবাদ করা যায় তা নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের প্রস্তাবে জেলায় প্রথম বিটরুট চাষ করেছি। তেমন যত্ন ছাড়াই ভালো ফলন হয়েছে। আগামীতে আরও বেশি জমিতে বিটরুটের আবাদ করবো।
তিনি আরও বলেন, এক কেজি বীজ ও সার মিলিয়ে ছয় হাজার টাকা, লেবার এবং পানি খরচ ৯ হাজার টাকা সবমিলিয়ে বিঘাপ্রতি ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বেলে, দো-আঁশ জাতীয় উর্বর মাটিতে চাষ করলে সার কম লাগে এবং এই গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হওয়ায় খরচ অনেকটাই কম। বিটরুটের বীজ ডিসেম্বর মাসের শুরুতে রোপণ করার উপযুক্ত সময়। বিটরুট উঠতে প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ দিন সময় লাগে। মার্চের শেষে ফসলটি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত সময়। এটি সুস্বাদু হওয়ায় খালি মুখে, ভাজি ও স্যুপ করে খাওয়া যায়।
আবু সুফি আহমেদ বলেন, খাবার হিসেবে বড় বড় সুপার শপ, রেষ্টুরেন্ট, চাইনিজ হোটেলগুলোতে স্যুপ, জুসসহ বিভিন্ন রেসিপি হিসেবে বিটরুট বিক্রি হয়। সবজিটির পুষ্টিগুণ অনেক এবং এতে ভিটামিন ‘এ’ প্রচুর পরিমাণে আছে। উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহাওষুধ হিসেবেও এটি খুবই কার্যকর। বিটরুট চাষ নীলফামারী মাটি ও আবহাওয়া জন্য উপযুক্ত। ফসলটি বেশি করে চাষের জন্য এলাকার কৃষকদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান বলেন, সুপারফুড হিসেবে পরিচিতি বিটরুট একটি বিদেশি সবজি। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সবজি। এই সবজি দেশের মানুষের পুষ্টিগুণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। বিটে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, কপার ও অন্যান পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। বিটে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুকি হ্রাস করে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বক্কর সাইফুল বলেন, আমাদের নীলফামারী জেলায় প্রথম বিটরুট চাষ করেছেন আবু সুফি আহমেদ। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে এই সবজি চাষে কৃষকদেরকে আগ্রহ করে তুলতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বিটরুট ব্যাপকভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় হবে। যুবকরা কৃষিতে আগ্রহী হলে কৃষি শিল্পে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে।