ব্যাটে রান আছে বলেই মুখ ফুটল মুশফিকুর রহিমের। লম্বা সময় ধরে গণমাধ্যম এড়িয়ে চলা মুশফিক বিপিএল চলাকালীন দুদিন সংবাদ সম্মেলনে আসলেন। চট্টগ্রামে ফরচুন বরিশালকে ম্যাচ জিতিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, ‘অনেক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে আসলাম। যা জিজ্ঞেস করার করতে পারেন।’
গতকাল ৪৭ রানের দ্যুতিময় ইনিংস খেলে দলকে ফাইনালে তুলেছেন। সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বলেছেন, ‘অনেক দিন পর ভালো খেলেছি বলেই সংবাদ সম্মেলনে এসেছি।’ এই সংবাদ সম্মেলনে আসা-না আসা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। সমালোচনাও হয়। কেবল পারফর্ম করলেই যে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হতে হয় বিষয়টা তেমন নয়। দলের প্রতিনিধি হয়ে চাইলেই যে কোনো সময় গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া যায়।
কিন্তু তারকা ক্রিকেটাররা নিজেদের ইচ্ছে মতো চলেন বলেই যখন খুশি তখন গণমাধ্যমের সামনে আসেন। তাই প্রয়োজনমাফিক তাদের প্রতিক্রিয়া চাইলেও জানা যায় না। যেমন মাহমুদউল্লাহ টেস্ট থেকে যে অবসর নিয়েছেন তা নিয়ে এখনও কথা বলেননি। ২০২৩ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর মুম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছিলেন, ‘অনেক দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছি।’
মুশফিকুর রহিম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের স্বীকৃত পেজে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর বিপিএলের নবম আসর খেললেও গণমাধ্যমের সামনে আসেননি। এবার বরিশালের জার্সিতে খেলছেন বিপিএল। দলকে তুলেছেন ফাইনালে।
তবে দেড় বছর পর তিনি করলেন বিস্ফোরক এক মন্তব্য। নিজের ইচ্ছায় অবসর নেননি বলে ইঙ্গিত করলেন। অথচ লম্বা সময় পর এসব নিয়ে কথা বলার দরকার ছিল কিনা তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকুর রহিম এক প্রশ্নের ফাঁকে বলে উঠেন, ‘অবসর নিয়ে নিয়েছিলাম ভাই?’ পরক্ষনেই হাসতে হাসতে বলেন, ‘হ্যাঁ, করেছিলাম (অবসর নিয়ে পোস্ট)।’
ওই আলোচনা সেখানে থেমে গেলেও সংবাদ সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে ড্রেসিংরুমে যাবার পথে নিজের আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার নিয়ে আরো খোলামেলা কথা বলেন। সেখানে জানতে চাওয়া হয় অবসর নেওয়ায় আক্ষেপ হয় কিনা, ‘না, না…অনুশোচনা করি না। অনুশোচনা করার কী আছে…?’
পরে যা বলেছেন তা স্পষ্ট ইঙ্গিত বাধ্য হয়েই অবসর নিতে হয়েছে তাকে, ‘শুধু আমি একটা প্রশ্ন করি, আমি কি টি-টোয়েন্টি অবসর নিয়েছি নিজের ইচ্ছায়? এতটুকু শুধু বলার আছে। যখন অবসর নিয়েছিলাম, তার আগের এক মাস একটু দেখে নিয়েন। আর কিছু বলার নেই।’
২০২২ এশিয়া কাপে চরম ব্যর্থ হওয়ার পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যান মুশফিক। অবসর বার্তায় লিখছিলেন, 'টি টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থেকে আজ আমি অবসর নিচ্ছি। তবে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট এবং ওয়ানডে খেলা চালিয়ে যাব। আশা করছি এই দুই ফরম্যাটে আমি আরও কিছু নিয়ে আসতে পারব দেশের জন্য।’
পরের দুইটি বিপিএলই ভালো গেল তার। গেল আসরে সিলেট স্ট্রাইকার্সের ফিনিশারের ভূমিকায় খেলে ১৫ ইনিংসে তার রান ৩৫৭, গড় ৩৯, স্ট্রাইক রেট ১৩২। এবার ১৪ ইনিংসে মুশফিকের রান ৩৩ গড় ও ১২৩ স্ট্রাইক রেটে ৩৬৭। এখনও যে মুশফিক এই ফরম্যাটে ‘অচল’ হয়ে যাননি সেই বার্তাও দিয়ে রাখলেন। সঙ্গে ফিটনেসের ইসু্যতে যেকোনো ক্রিকেটারকে চ্যালেঞ্জও দিলেন।
মুশফিক বলেন, ‘টপ ফিটনেসের মানদন্ড কিভাবে দেবেন? বয়স আর পারফরম্যান্সে… ? আমার মনে হয়, বয়স আর পারফরম্যান্সের চেয়ে সবচেয়ে ভালো হয় কারও ফিটনেস এবং পারফরম্যান্স কতটুকু…। বয়স স্রেফ একটা সংখ্যা। নাহলে জিমি অ্যান্ডারসনের মত ১৮৮ বা এরকম টেস্ট (১৮৭টি) খেলা খেলোয়াড় বিরল থাকত। এখনও সেটাই করে চলেছে সে, যেটা সবচেয়ে ভালো পারে।’
‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে প্রমাণ করার জন্য আমি খেলি না। আমাকে যারা দলে নিয়েছে, বিশেষ তামিমকে ধন্যবাদ এবং বরিশালের মালিকপক্ষকে, সেই বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে… যে কারণে তারা আমাকে নিয়েছে, আমি যেন তাদের সেটা ফিরিয়ে দিতে পারি পারফরম্যান্স দিয়ে।’-আরও যোগ করেন মুশফিক।