নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ (৬ মার্চ)। দীর্ঘ এই সময়ে ৭০ বার তারিখ পেছানোর পরও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১১।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন ত্বকী। দুই দিন পর শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের এক বছরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১১ ত্বকী হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের শনাক্ত করার বিষয়টি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। ওই সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বিকে শায়েস্তা করতেই আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছেন। শিগগির আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ১১ বছরেও সেই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়নি। ঝুলে আছে ত্বকী হত্যা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া।
ত্বকী হত্যার বিচার চেয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ২৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি প্রদান করেন। তারা অবিলম্বে ত্বকী হত্যা মামলার বিচার শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, জেলায় চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক মামলা নিষ্পত্তিসংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির ২৫টি মামলার মধ্যে ত্বকী হত্যা তালিকার ১১ নম্বরে। এর মধ্যে ২২টি মামলাই আদালতে বিচারাধীন। তদন্তাধীন দুটি মামলার মধ্যে ত্বকী হত্যা একটি। সবশেষ ২০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা।
ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে ১১ বছর ধরে প্রতি মাসের ৮ তারিখে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম বলেন, দুই আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নাম এলেও সেই আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া ও আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল না করা নজিরবিহীন।
দীর্ঘদিন ধরে ত্বকী হত্যা মামলা ঝুলে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নূরউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, র্যাবের প্রস্তুত করে রাখা সেই অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হোক, ঘাতকদের বিচার শুরু করা হোক।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ বলেন, ত্বকী হত্যার বিচারের দাবিতে বিশ্বের ২১টি দেশে প্রতিবাদ হয়েছে। এ বিচারের দাবিতে টানা ১১ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন, আলোক প্রজ্বলন, গোলটেবিল বৈঠক, প্রতীকী অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। দেশের লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীগণ প্রতিনিয়ত লেখালেখি, কবিতা, ছবি আঁকা, গান রচনা, প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণ, স্মারক গ্রন্থ, গান ও আবৃত্তির সিডি প্রকাশসহ বিভিন্নভাবে এ হত্যার বিচার চেয়ে আসছেন।
তিনি আরও বলেন, দেশে কোনও অপরাধ সংঘটিত হলে ৬০ দিনের মধ্যে তার অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ ১১ বছরেও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়নি।