বান্দরবান আলীকদমে বিলুপ্ত প্রায় ‘রেংমিটচ্য ভাষা’। এই ভাষায় কথা বলতে পারেন মাত্র ছয়জন মানুষ। তারা সবাই ষাটোর্ধ্ব। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর রেংমিটচ্য ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে আলীকদম সেনা জোন কর্তৃক 'ক্রাংসিপাড়া সেনা মৈত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
রোববার (১০ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর প্রধান অতিথি হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ এই স্কুল উদ্বোধন করেন। সেই সঙ্গে এই স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষা সামগ্রী, ক্রীড়া সামগ্রি, ও ক্রাংসি পাড়াবাসীদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম-এ ‘আমি মরে গেলে আমাদের ভাষাও মরে যাবে’ শিরোনামে রেংমিটচ্য ভাষা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
স্কুল উদ্বোধনের পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিলুপ্ত প্রায় রেংমিটচ্য ভাষার সম্পর্কে গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এই ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে শুধুমাত্র সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছি। যেখানেই আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে সেখানেই কাজ করছি। শিক্ষা প্রসার, চিকিৎসা সহায়তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন মান উন্নয়ন করতে বান্দরবান সেনা জোন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
নবনির্মিত ক্রাংসিপাড়া সেনা মৈত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চিংরাও ম্রো বলেন, আমাদের রেংমিটচ্য ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে এতদিন নিজের বাড়িতে ছেলেমেয়েদের পড়িয়েছি। পাড়াবাসী ও রেংমিটচ্য ভাষাভাষীর পরিবারের স্কুল নির্মাণে ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক অস্বচ্ছলতা কারণে নির্মাণ করতে পারিনি। সেনাবাহিনীর উদ্যোগে স্কুল নির্মাণ হয়েছে। এই স্কুলের মাধ্যমে রেংমিটচ্য ভাষা নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের শিখাতে পরবো।
এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নবনিযুক্ত বান্দরবান রিজিওন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মেহেদী হাসান, আলীকদম সেনা জোনের জোন কমান্ডার লে: কর্ণেল শওকাতুল মোনায়েম, আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার তবিদুর রহমান, ক্রাংসি পাড়াবাসী ও নবনির্মিত স্কুলের শিক্ষার্থীরা।
প্রসঙ্গত, বান্দরবান জেলা শহর থেকে ১১৯ কিলোমিটার দূরে আলীকদম উপজেলা। সেখান থেকে তৈন খাল হয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকা যোগে দেড় ঘণ্টা উজানে গিয়ে রাণীর ঘাট।এক ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় তৈনফা মৌজার দুর্গম পাহাড়ের ক্রাংসি পাড়ায়। এই পাড়ায় 'রেংমিটচ্য' ভাষাভাষী মানুষের বসবাস। এই পাড়ায় মোট ২৮ পরিবারের মধ্যে এখনও রেংমিটচ্য ভাষার ৭টি পরিবার রয়েছে। কিন্তু, চার জন ব্যক্তি ছাড়া, নতুন প্রজন্মের কেউই এ ভাষায় কথা বলতে পারেন না। অন্য দু'জন হলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওয়াই বট পাড়ার বাসিন্দা।