সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয়েছে বাংলাদেশী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জিম্মি হওয়া ২৩ জনের মধ্যে রয়েছেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের নাবিক নাজমুল হক (২৩)। ছেলেকে জীবিত ফিরে পেতে বাড়িতে বাবা-মা আকুতি করেই চলছে।
বুধবার (১৩ মার্চ) দুপুরে কামারখন্দের চর-নুরনগর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) জিম্মি হওয়ার পর রাত এগারটায় মা-বাবার সঙ্গে নাজমুল সর্বশেষ কথা বলে জানান, জাহাজে থাকা ২৩ নাবিক ও ক্রুকে জিম্মি করেছে জলদস্যুরা।
নাবিক নাজমুল জেলার কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চর-নুরনগর গ্রামের আবু সামা শেখের ছেলে।
নাজমুলের বাবা-মা বলেন, আফ্রিকা থেকে দুবাইয়ের দিকে সাগর পথে যেতে ২৩ জন নাবিক-ক্রু’র সাথে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হন তেলবাহী জাহাজের নাবিক নাজমুল। সবার মোবাইল জব্দ করা হলেও নাজমুল কৌশলে একটি মোবাইল সেট গোপনে লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হন। তা দিয়েই কথা হয় পরিবারের সাথে।
নাজমুলের বাবা আবু সামা শেখ একজন কৃষক। দুই ভাইবোন ও বাবা-মাকে নিয়ে চারজনের সংসার নাজমুলের। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর এক বছর হলো জাহাজে চাকরি করছেন নাজমুল। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর তিনি এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে কাজ শুরু করেন।
নাজমুলের বাবা আবু সামা শেখ বলেন, নাজমুল আমার একমাত্র ছেলে। ওর টাকাতেই আমাদের সংসার চলে। সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলেকে যেন জীবিত ফিরিয়ে দেয়।
মা নার্গিস খাতুন বলেন, গতকাল রাত এগারোটার দিকে নাজমুল কল দিয়ে বলে; মা, আমাদের ২৩ জনকে আটকে রেখেছে। আমাদের জন্য দোয়া করো। এই বলে আমার বুকের মানিক ফোন কেটে দেয়।
তিনি আরও বলেন, নাজমুলের আয়েই তাদের সংসার চলে। ছেলের বিপদের কথা শুনে আগের চেয়েও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তার বাবা। নাজমুলকে জীবিত ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাই।
সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশ (ডিএসবি) ইনচার্জ আব্দুর রহিম খান বলেন, স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে পুলিশ সুপারের নির্দেশে নাজমুলের পাসপোর্ট নাম্বার ওয়েব সাইটে সার্চ দিয়ে তার পরিবার-পরিজনের নাম ঠিকানা জানতে পেরেছি।
কামারখন্দ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সোমা খাতুন বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় জিম্মি হওয়া নাবিকের বাড়িতে এসেছি। পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা করবেন সরকার।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া নাবিকদের দ্রুত মুক্তির জন্য সরকার চেষ্টা করে যাবে।
পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে নাজমুলের পরিবার-পরিজনকে আশ্বস্ত করতে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।