খেলাধুলা

শান্তর বীরত্বগাথায় ঝলমলে বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে মুখোমুখিতে বিশ্বকাপ মঞ্চে দিল্লিতে সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন মাত্র ১০ রানের জন্য। এর আগেও একবার সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে পাওয়া হয়নি। আজ নব্বইয়ের ঘরে থেকে মাদুশানকে স্ট্রেইট ড্রাইভে যে চারটি মেরেছেন তা হয়তো দিনের অন্যতম সেরা। নাজমুল হোসেন এবার ভুল করলেন না। নার্ভাস নাইন্টিজে আটকালেন না। তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। সঙ্গে তার দলও পেয়ে গেল অসাধারণ এক জয়।

অধিনায়ক শান্তর সেঞ্চুরিময় ইনিংসে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২৫৬ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে শান্তর ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংসে। শান্তর সেঞ্চুরির মতো উজ্জ্বল ছিল মুশফিকুর রহিমের ঝলমলে ৭৩। দুজনের পঞ্চম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটিতে বাংলাদেশের অনায়াস জয় চলে আসে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যা বাংলাদেশের পঞ্চম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ। 

তবে এই অনায়েস জয়ের চিত্র দুই ইনিংসের শুরুতে বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। উদ্বোধনী জুটিতে ৯.৫ ওভারে ৭১ রান তুলে আভিশকা ফার্নান্দো ও পাথুম নিশাঙ্কা ভয় ধরিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। সেখান থেকে তানজিম হোসেন সাকিবের পরপর ৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা ব্যাকফুটে চলে যায়। ইনিংসের মধ্যভাগে আবার লড়াই করে মাথা তুলে দাঁড়ালেও বাংলাদেশের পেসারদের দারুণ বোলিংয়ে শেষটায় তারা বড় পুঁজি পায়নি। তবে কৃত্রিম আলোয় এই পুঁজিও কম চ্যালেঞ্জিং নয়।   লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ শুরুতেই বিপর্যয়ে। লিটনের সঙ্গী হবেন কে তা নিয়ে ছিল আলোচনা। হাথুরুসিংহে প্রিয় ‘ছাত্র’ সৌম্যকে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু দুই ওপেনারই ব্যর্থ। লিটন ইনিংসের প্রথম বলে বোল্ড। সৌম্য নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন প্রতিপক্ষকে ৩ রানে। চারে নেমে তাওহীদ জড়তা কাটাতে না পারে একই রানে বোল্ড।   ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন মাহমুদউল্লাহ ও শান্ত। মাহমুদউল্লাহর প্রতি আক্রমণে বোলাররা হয়ে যান দিশেহারা। শান্তও সুযোগ বুঝে মেলে ধরেন বাউন্ডারির পাখা। তাতে রান আসে অনায়াসে। দুজনের ৬৯ রানের জুটিতে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে চলে আসে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর পায়ে টান লাগায় ঠিকঠাক খেলতে পারছিলেন না। বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে শট খেলতে গিয়ে তাকে থেমে যেতে হয় ৩৭ রানে। ৩৪ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়ে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন তিনি।   সেখান থেকে মুশফিক ও শান্ত দলের ভরসা হয়ে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। অপ্রয়োজনে দুজনের কেউই বাড়তি ঝুঁকি নেননি। ক্রিকেটীয় ব্যাকরণের পসরা সাজিয়ে দুজনই ব্যাটিং করতে থাকেন। ৯৬ থেকে শান্ত সেঞ্চুরিতে পৌঁছান পেসার কুমারাকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। শুরুতে থিতু হতে সময় নেওয়া শান্ত ফিফটি পূর্ণ করেন ৫২ বলে। তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছতে তাকে খেলতে হয় ১০৮ বল। ১১ চার ও ১ ছক্কা হাঁকান সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে। শেষমেশ চার মেরে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের অধিনায়ক।   এছাড়া দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলা মুশফিক অভিজ্ঞতার সবটা দেখিয়েছিন আজ। কোনো জড়তা থাকা নিজের সহজাত ব্যাটিংয়ে ৭৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ৮৪ বলে ৮ চারে সাজান ইনিংসটি।   এর আগে তানজিমের ওই বিধ্বংসী স্পেলের পর বাংলাদেশ ম্যাচের নাটাই নিজের কাছেই রেখেছিল। যদিও লড়াই করেছিল কুশল মেন্ডিস ও জানিথ লিয়ানাগে। দুজনের জুটিতে এসেছিল ৬৯ রান। লিয়ানাগে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন। ৬৯ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ইনিংসটি সাজিয়ে দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেন তরুণ ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেছেন কুশল মেন্ডিস। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ৭৫ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান।

বাংলাদেশের তিন পেসার শরিফুল, তাসকিন ও তানজিম ৩টি করে উইকেট পেয়েছেন। মিরাজের পকেটে গেছে ১ উইকেট।মোস্তাফিজের পরিবর্তে সুযোগ পাওয়া তানজিম ৪৪ ওভারে ৩ উইকেট পান। নিজের কোটার ওভার শেষ করতে পারেননি। ৮. ৪ ওভার শেষে মাঠ ছাড়েন। তাসকিন ও শরিফুল শুরুতে ব্যয়বহুল থাকলেও পরে ফিরে এসেছে ভালোভাবেই। তাতে লক্ষ্য নিজেদের নাগালের বাইরে যেতে দেননি তারা।

এরপর শান্তর বীরত্বগাথায় ৩২ বল আগেই জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।