‘আত্ম মানবতায় সমাজ গড়ি, দানে নয় নিজের টাকায় ইফতার করি’— স্লোগান সামনে রেখে বগুড়ার একদল যুবক মাত্র এক টাকায় ইফতার বিক্রি করছেন অসহায় এবং দুস্থদের মাঝে। রমজানের প্রথম দিন থেকে বিকাল ৫টার পর ২০০ জনের বেশি লোকের জন্য ইফতারের প্যাকেট নিয়ে হাজির হচ্ছেন তারা। শহরের ছিন্নমুল, ভিখারি, রিকশাচালক এবং স্বল্প আয়ের মানুষ এক টাকায় ইফতার কিনছেন।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে রোজা রেখে অনেকের ভাগ্যে ইফতার যোগার করাও কঠিন হয়ে পড়ে, এমন ব্যক্তিদের কথা চিন্তা করে গত বছর নিজের ক্যামেরা বিক্রির টাকায় মাত্র ৫০ প্যাকেট ইফতার নিয়ে এক টাকায় বিক্রি শুরু করেন ভিডিও এবং ফটোগ্রাফি পেশায় যুক্ত আহসান হাবীব সেলিম। তার এমন উদ্যোগ স্বাগত জানিয়ে তার বন্ধুবান্ধব এবং কাছের মানুষেরা এগিয়ে আসেন। পরবর্তীতে পুরো মাসজুড়ে চলে তাদের এই আয়োজন। গত রমজানে তারা এক দিনে সর্বোচ্চ ৫০০ ব্যক্তির মাঝে এক টাকায় ইফতার বিক্রি করেছেন।
চলতি রমজানেও তারা একইভাবে পুরো মাস অসহায় মানুষদের পাশে এক টাকায় ইফতার নিয়ে হাজির থাকবেন জানিয়ে আহসান হাবীব সেলিম বলেন, ‘লাইফ লাইন, উই আর ফ্যামিলির ব্যানারে আমরা অসহায় মানুষদের পাশে থাকার চেষ্টা করি। গত বছর থেকে আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করার চেষ্টা করছি। রমজানে এক টাকায় ইফতার দিয়ে অসহায় নিম্নবিত্তদের পাশে দাঁড়ানো দিয়ে আমরা আমাদের কাজ শুরু করি। এরপর গত শীতে এক টাকায় দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেছি। এবার রমজানে এক টাকায় ইফতার বিক্রি করছি।’
সেলিম আরও বলেন, ‘একজন এক টাকায় একটি প্যাকেট নিতে পারেন। এবার এখন পর্যন্ত আমরা একদিনে সর্বোচ্চ আড়াইশত মানুষকে ইফতার দিতে পেরেছি। আগামীতে আরও বড় আয়োজনের ইচ্ছা আছে। গত রমজানে এ আয়োজনে আমরা ১০ জন ছিলাম। এবার ৬ জন আমার সঙ্গে আছেন। সজিব আহমেদ, এসকে বিশাল, মনির, মুক্তার, মারুফ, ওবায়দুর রহমান রবি। সবাই আমরা বন্ধু। প্রত্যেকে কর্মজীবী। আমরা নিজেরাই টাকা দিয়ে বাজার করি। কেউ আজ বাজার করল তো কেউ কাল। এভাবে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের কোনো দিন সাড়ে তিন হাজার আবার কোনো দিন ৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। আমরা বিরিয়ানি রান্না করি। বিরিয়ানিতে কখনও গরুর মাংস, কখনও খাসির, আবার কখনও মুরগি দেই। অসহায় গরিব মানুষদের এক টাকায় ইফতার তুলে দিতে আমাদের আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা আরও ভালো কাজ করতে পারব।’
আপনারা তো ফ্রিতেই ইফতার বিতরণ করতে পারতেন, এক টাকায় কেন বিক্রি করছেন জানতে চাইলে সেলিম বলেন, ‘ফ্রিতে কোনো কিছু খাওয়া আর নিজের টাকায় কিনে খাওয়ার মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে। তারা যেন উপলব্ধি করতে পারে, তারা নিজের টাকায় কিনে খাচ্ছে, দয়ায় না; এজন্য তাদের কাছ এক টাকা করে নিচ্ছি।’
এক টাকায় পেটপুরে খাওয়ার মতো ইফতার কিনতে পেরে খুশি নিম্নবিত্ত, ছিন্নমূল, রিকশা চালকরা। শহরের রিকশা চালক আইয়ুব বলেন, ‘সারা দিন রোজা থেকে এক টাকায় এরকম ইফতার ভাগ্যের বিষয়। অন্য কোথাও গেলে এই ইফতার কিনতে ৫০ টাকার বেশি লাগবে। সেখানে এক টাকায় ইফতার পাচ্ছি।’
ভিখারি মরিয়ম বেওয়া জানান, প্রতিদিন তিনি এক টাকায় ইফতার কিনতে সাতমাথায় আসেন। আগে মানুষের কাছে ইফতারের জন্য হাত পাততে হতো। এখন আর হাত পাততে হয় না।
এমন উদ্যোগ সাধুবাদ জানিয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রশিদ সাইন বলেন, গরিব এবং অসহায় মানুষদের জন্য এটা ভালো উদ্যোগ। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে প্রতিদিন এক টাকার বিনিময়ে ইফতার সংগ্রহ করতে পারছে। রমজান মাসে অন্যান্য এলাকাতেও অসহায় মানুষদের জন্য এ রকম উদ্যোগ নিয়ে সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসা উচিত।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে মানুষ কষ্টে আছে। এমন সময় এরকম উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে এ কার্যক্রম পুঁজি করে যেন কেউ ব্যবসা না করে, সেদিকে খেয়ালও রাখতে হবে।
সাংবাদিক ইউনিয়ন বগুড়ার সভাপতি গনেশ দাস বলেন, ‘যুবকদের এমন উদ্যোগ মনে ধরার মতো। তাদের এমন উদ্যোগ সাধুবাদ জানাই। এমন ভালো কাজ নিয়ে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।’