নোয়াখালীতে ফুটপাতে গ্যাস সিলিন্ডার রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। আবার হোটেল- রেস্তোরাঁয় যত্রতত্র অরক্ষিত অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বা সতর্কতা দেখা যায় না। বাসা-বাড়িতেও একই অবস্থা। এতে বিস্ফোরণের আশঙ্কা রয়েছে।
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীর প্রধান সড়কের পাশে শতাধিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট রয়েছে। প্রধান সড়ক লাগোয়া এসব হোটেল-রেস্তোরাঁয় সামনের ফুটপাতে যত্রতত্র অরক্ষিত অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করে চলছে রান্নার কাজ। আবারও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে দেদারসে বিক্রি করছে গ্যাস সিলিন্ডার। বেশিরভাগ হোটেল বা রেস্তোরাঁ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। হাতে গোনা কয়েকটিতে অগ্নিপ্রতিরোধের সরঞ্জাম থাকলেও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে ধারণা নেই।
সাধারণ মানুষের মাঝেও অগ্নিঝুঁকি ও অগ্নিনির্বাপণ বিষয়ে সচেতনতা বা সতর্কতা নেই। তবে সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সরকার থেকে যথাযথ তদারকির মাধ্যমে যত্রতত্র অরক্ষিত অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস ব্যবহারে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার না করতে ব্যবসায়ীদের সচেতন করা প্রয়োজন।
জেলা শহরে চাইনিজ রেস্তোরাঁয় পরিবার নিয়ে খেতে আসা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘বাচ্চারা বায়না ধরেছে, বাইরে খাবে। গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথাটি আসলে এভাবে কখনও চিন্তা করিনি। প্রতিষ্ঠানের উচিত গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের বিষয়ে আরও সর্তক হওয়া এবং অগ্নিনির্বাপণের দিকে নজর দেওয়া।’
আরমান নামে আরেকজন বলেন, ‘শহরের প্রধান সড়কের পাশে হোটেলে জনসমাগম থাকে। এসব হোটেলে প্রকাশ্যে অসতর্কভাবে ব্যবহার হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডার। পাশেই দাঁড়িয়ে মানুষ ধুমপান করছে। যে কোনো মুহুর্তেই দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
নুরুল হক নামে ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার দোকনের পাশে আরেকটি দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে। তাদের সতর্কতার সঙ্গে ব্যবহার করতে বলেছি। এই দোকানে যদি আগুন লাগে, তাহলে আশপাশের শতাধিক দোকানে তা ছড়িয়ে পড়বে। প্রাণহানিও ঘটতে পারে।’
গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসায়ী রায়হানুল আমিন বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছি। দোকানে অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও আমরা সতর্ক থাকি।’
নোয়াখালী ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘যেসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে, তাদের চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। আমারও প্রতিনিয়ত তাদের এ বিষয়ে মনিটরিং করছি। তাদের সচেতন হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার ও অগ্নিনির্বাপণের বিষয়ে আমাদের কার্যক্রম আরও বেগবান করা হয়েছে।’
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডে নোয়াখালী জেলা শহরের একই পরিবারের মা ও দুই শিশু সন্তানসহ জেলার ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এই অগ্নিকাণ্ডে ৪৬ জন মারা যায। এছাড়াও গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ৫ শিশুসহ ৯ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। ওই ৫ শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।