পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এবার গোড়া পঁচা রোগের আক্রমণে তরমুজের ফলন ভালো হয়নি। জেলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজ জন্মায় লংগদু উপজেলায়। কিন্তু এবার সেখানকার অনেক কৃষক জানিয়েছেন, বীজ নষ্ট হওয়ায় এবং গোড়া পঁচা রোগের কারণে ফলন কম হয়েছে।
রাঙামাটি শহরের বনরুপা এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, তরমুজের ফলন ভালো না হওয়ায় খুচরা বাজারে দাম বেশি। বনরুপার খুচরা ব্যবসায়ী সুমন মিয়া জানান, ছোট সাইজের তরমুজ বিক্রয় হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। বড় সাইজের তরমুজ বিক্রয় হচ্ছে ২৫০-৪০০ টাকায়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় ৩৯ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন হয় ৯ হাজার ৮৭৫ মেট্রিক টন। কিন্তু এবার ২২৮ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাঙামাটি শহরের বনরূপা বাজারের সমতাঘাট ও ট্রাক টার্মিনাল ঘাটে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে চাষিরা তরমুজ আনছে বিক্রি করার জন্য। তবে এবার ফলন ভালো না হওয়ায় চাষিদের চোখেমুখে হতাশার ছাপ।
বনরুপা সমতাঘাটের তরমুজ বিক্রেতা দীপংকর চাকমা বলেন, ‘আমি লংগদু থেকে তরমুজ কিনে আনছি। সেখানে ছোট সাইজের তরমুজ ১০০-১৩০ টাকা করে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। এবার পোকা আসায় অনেক ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছরের চেয়ে এবার দাম চড়া। তাই লাভ করতে পারছি না।’
লংগদু উপজেলার ভাসান্যাদামের তরমুজ চাষি আল আমিন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের ফলন কম। এবার তরমুজ আবাদে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর রাঙামাটির তরমুজ কিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করে তারা বেশ লাভ করতেন। এবার ফলন কম হওয়ায় চাষিদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে এ বছর সুবিধা করতে পারবেন না বলে জানান তারা।
লংগদু উপজেলার কৃষক আবু সৈয়দ বলেন, ‘এ বছর তরমুজের বীজ নষ্ট হওয়ায় আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তরমুজ চাষ করে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তরমুজ বিক্রি করে সর্ব্বোচ ৫০ হাজার টাকা পাব। আমার আড়াই লাখ টাকা শেষ।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, তরমুজের বীজ মুলত হাইব্রিড বীজ। হাইব্রিডের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বীজের যদি গুণগতমান সঠিক না হয়, তাহলে ফলন কমে যাবে এবং বিভিন্ন রোগের আক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
তিনি বলেন, ‘বীজ কিন্তু আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এ বছর রাঙামাটিতে গোড়া পঁচা রোগের কারণে তরমুজের ফলন ভালো হয়নি।’
উপপরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার তরমুজের আবাদ ভালো হয়নি। ভালো ফলন পেতে গেলে ক্ষেতে প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। সময়মতো সেচ দিতে হবে। প্রয়োজনমতো ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।