চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিকায়নের কারণে মানুষের রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে- এসব যন্ত্রের ব্যবহার, অর্থাৎ বিভিন্ন রকম রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে রোজা ভাঙবে কি না? আজ আমরা এ সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয়ের মাসআলা নিয়ে আলোচনা করব। ইনজেকশন: টিকা, ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙবে না। (যাওয়াহিরুল ফতোয়া)
এনজিওগ্রাম: হার্ট ব্লক হলে উরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রক্ত নালীর ভিতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত ক্যাথেটর প্রবেশ করিয়ে যে ব্যবস্থায় পরীক্ষা করা হয় তার নাম এনজিওগ্রাম। এই চিকিৎসায় রোজা ভাঙবে না। যন্ত্রটিতে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা কোনোভাবেই ভাঙবে না। (যাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
এন্ডোস্কপি: এন্ডোস্কপি হচ্ছে এক ধরনের পরীক্ষা, যার মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর শরীরের ভেতরে কোনও অংশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। এন্ডোস্কপি শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি নমনীয় টিউবের মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এখানে দুটি অবস্থা হতে পারে: যেমন পাইপে ওষুধ ব্যবহার কিংবা বাইরে থেকে যদি ওষুধ বা পানি ছিটানো হয় তাহলে রোজা ভাঙবে। কিন্তু ওষুধ দেওয়া না হলে রোজা ভাঙবে না। (যাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
লেপারোস্কপি: উচ্চ তীব্রতাসম্পন্ন আলোর সঙ্গে অতি ক্ষুদ্র ক্যামেরাকে নাভির ছোট্ট ছেদ দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সার্জিক্যালের সরঞ্জাম ঢোকানোর জন্য ক্ষত করে ছোট ছোট ফুটো করা হয়। পেটের ভিতরের কোন অংশ বা কোষ ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য কেটে আনা হয় এই পদ্ধতিতে। এখানে যন্ত্রটিতে যদি ওষুধ বা পানীয় ব্যবহার হয় তাহলে রোজা ভাঙবে অন্যথায় ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহী)
অক্সিজেন গ্রহণ: অক্সিজেন ব্যবহারের দুটি পদ্ধতি থাকে। এক ওষুধ মিশ্রিত, দুই ফ্রি অক্সিজেন তথা শুধু বাতাস। ওষুধ মিশ্রিত হলে রোজা ভাঙবে, অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (যাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
রক্ত দান: রক্ত দিলে রোজা ভাঙবে না। (আহসানুল ফতোয়া)
রক্তগ্রহণ: প্রয়োজনবশত রক্ত নিলে রোজা ভাঙবে না। (আহসানুল ফাতাওয়া)
সিস্টোস্কপি: মূত্রনালী দিয়ে ক্যাথেটার প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয় তাকে সিস্টোস্কপি বলে। এর মাধ্যমে রোজা ভাঙবে না, চাই ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক। (হেদায়া)
চোখে ওষুধ বা সুরমা: চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করলে রোজা ভাঙবে না যদিও তার স্বাদ গলার ভিতরে অনুভব হয়। (হেদায়া)
স্যালাইন গ্রহণ: স্যালাইন সাধারণত রক্তনালীতে দেওয়া হয়। তাই স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না (হেদায়া)। অবশ্য ক্ষুধা নিবারক এক প্রকার স্যালাইন রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করলে রোজা মাকরুহ হবে। (হেদায়া)
আলট্রাসনোগ্রাম: আলট্রাসনোগ্রাম এবং এর সাথে যে ওষুধ ব্যবহার করা হয় তার সবগুলোই চামড়ার উপরে। তাই এর মাধ্যমে রোজা ভাঙবে না। (ফাতওয়ায়ে শামীম)
দাঁত তোলা: রোজা অবস্থায় দাঁত উঠালে রোজা ভাঙবে না। (আহসানুল ফতোয়া)
পেস্ট বা টুথপাউডার ব্যবহার: রোজা অবস্থায় এগুলো ব্যবহার করা মাকরুহ। তবে এর মাধ্যমে রোজা ভাঙবে না। (ফতোয়ায়ে শামি)
ইনহেলার: শ্বাসকষ্ট দূর করতে তরল জাতীয় একটি স্প্রে মুখে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে ওষুধ গলায় প্রবেশ করে বিধায় রোজা ভঙ্গ হবে। (ইমদাদুল ফাতোয়া)
নাইট্রোগ্লিসারিন: হৃদপিণ্ডের চিকিৎসার জন্য এই জাতীয় ওষুধ ২-৩ ফোটা জিহ্বার নিচে দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখতে হয়। ওষুধটির কিছু অংশ গলায় প্রবেশ করার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে বিধায় এতে রোজা ভেঙে যাবে। (যাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
প্রক্টোসকপি: পাইলস, ফিসার, অর্শ, হারিশ, বুটি, ফিস্টুলা ইত্যাদি রোগের পরীক্ষার জন্য মলদ্বারে নল প্রবেশ করানো হয়। নলের সঙ্গে এক প্রকার গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়। এর ফলে রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতোয়ায় শায়মী)
কপার টি: এটি এক ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে রোজা ভেঙে যাবে। এটি ব্যবহারে কাজা ও কাফফারা উভয়ে আবশ্যক। (ফিকহী মাকালাদ)
ডিএনসি: এই প্রক্রিয়ায় জরায়ুতে এবং জরায়ু থেকে টিস্যুর স্যাম্পল বা নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই নমুনা পরীক্ষা করে মূলত দুটি কাজ করা হয়। এক কোনো মিসক্যারেজ বা অ্যাবরশান হওয়ার পর ডিএনসি করে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। দুই জরায়ুতে কোনো অস্বাভাবিকতা থাকলে তা সনাক্ত করার জন্য ডিএনসি করা হয়। ডিএনসি অনেক সময় অ্যাবরশানের জন্যও ব্যবহৃত হয়। এটি করলে রোজা ভেঙে যাবে। (হেদায়া)