সারা বাংলা

লালমনিরহাটে ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক ‘এক কাতার’ মসজিদ

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার গোড়ল ইউনিয়নের হাজীপাড়ায় রয়েছে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ। ভেতরে নামাজের জন্য একটি মাত্র কাতার হওয়ায় ১৩ থেকে ১৪ জন মুসল্লি জামাতে নামাজ পড়তে পারেন। এই মসজিদটি কতো বছর আগে নির্মাণ হয়েছে তার সঠিক তথ্য কারও জানা না থাকলেও নির্মাণশৈলি দেখে স্থানীয়রা ধারণা করেন, মসজিদটির বয়স ৫০০ বছরের বেশি। এলাকার মানুষের কাছে ‘এক কাতার’ মসজিদ নামেই পরিচিত এই মসজিদ। 

মসজিদের বাম পাশে একটি প্রাচীন কবর রয়েছে। ধারণা করা হয়, যিনি মসজিদটি নির্মাণ করেছেন এটি তারই কবর। মসজিদের ডান পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে শিয়া সম্প্রদায়ের দাহা। যার দেয়ালের প্রতিটি অংশে দেখা যায় প্রাচীন কারুকার্য। প্রাচীন হলেও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কেউ এখনো মসজিদটিতে আসেননি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া, বিভিন্ন স্থান থেকে এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন প্রচুর সংখ্যক মানুষ। 

এক কাতার মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মোস্তাফা বলেন, মসজিদটি কত বছর আগে বা কারা নির্মাণ করেছেন তা স্থানীয়দের কেউ বলতে পারেন না। অনেকেই মোঘল আমল বা ৫০০ বছর আগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে দাবি করলেও এর সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।  আমার দাদা তার দাদার কাছে শুনেছেন মসজিদের ইতিহাস। তারাও মসজিদ নির্মাণের সন (সাল) বা সঠিক ইতিহাস জানতেন না। 

স্থানীয় মুসুল্লি গজর পাটোয়ারী বলেন, মসজিদটির দেয়াল অনেক পুরু। এতে অনেক কারুকার্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে এমন মসজিদ নির্মাণ সহজ হবে না। এই মসজিদে নামাজ আদায় অনেক আরামদায়ক। 

নুরুজ্জামান নামের অপর একজন বলেন, আমরা আমাদের পূর্ব পুরুষদের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ তারা মসজিদের ইতিহাস না জানলেও এটিকে ধরে রেখেছেন। আমরাও এই ঐতিহাসিক স্থপনাকে আগামী প্রজন্মের কাছে রেখে যেতে চাই। 

হাজিপাড়া এক কাতার জামে মসজিদের সভাপতি ফিরোজ কাদের বলেন, ৫০০ বছর আগে নির্মিত এই মসজিদটির দেয়ালে অনেক কারুকার্য রয়েছে। পাশে দুটো কবর ও শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মিনার রয়েছে। মিনারটিতেও অনেক সুন্দর করে কারুকার্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মসজিদের ভিতরে এক সঙ্গে ১৪-১৫ জনের বেশি নামাজ আদায় করতে পারেন না। 

ঐতিহাসিক এই মসজিদটিকে সংরক্ষণ করার দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, মসজিদ ও এর সব স্থাপনা সংরক্ষণ এবং এলাকার মুসুল্লিদের নামাজের সুবিধার জন্য পাশেই একটও নতুন মসজিদ নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ সচেতন সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

গোড়ল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ধরে রাখা উচিত। এর মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম মসজিদটি সম্পর্কে জানতে পারবে। এরই মধ্যে মসজিদের কিছু স্মৃতি বিলীন হয়েছে। যেটুকু রয়েছে তা টিকিয়ে রাখতে এবং ঐতিহ্য ধরে রেখে সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সুনজর প্রয়োজন।