কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিকেল হলেই যেখানে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলায় মেতে উঠত। সেখানে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা যতই কাছাকাছি আসে, ততই আনাগোনা বাড়তে থাকে শিক্ষার্থীরদের। পশ্চিমাকাশে সূর্য হেলে যেতেই ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বসে পড়েন তারা। চৈত্রের শেষ বিকেলে খোলা আকাশের নিচে কেউ শরবত বানাতে আবার কেউ ছোলা-মুড়ি মাখানোর কাজ শুরু করে দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, শহিদ মিনার, মুক্তমঞ্চ, কাঁঠালতলা, ক্যাফেটেরিয়ার ছাদ, বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের করিডোর ও অনুষদের হলরুম এবং ছাদের আঙিনায় জমে উঠে ইফতারের মহোৎসব। এসব স্থানগুলোর পরিবেশ হয়ে উঠে প্রাণোচ্ছল। এ যেন সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধনের এক অপরূপ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে ইফতারির আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোও ইফতারের আয়োজন করে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকরাও সামিল হন।
এদিকে বিকাল থেকে ইফতারি কেনাকাটায় শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসের মূল ফটক, ক্যাফেটেরিয়া, গোলচত্ত্বর।
এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তুলতে বিকেল ৫ টা থেকে ১০ টাকায় ইফতারি বিক্রি করতে দেখা যায় নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মিরাজকে। গোলচত্ত্বরে ৫০ টাকা মূল্যের ইফতারি মাত্র ১০ টাকায় বিক্রি করেন। ইফাতরি নেওয়ার জন্য দীর্ঘ সারি বেঁধে অপেক্ষা করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। যে কেউ সেখান থেকে ইফতারি কিনতে পারে।
ইফতারিতে অংশগ্রহণ করা ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা রিপ্তি বলেন, রমজান মাস প্রতিটি মুসলমানের জন্য সংযম ও ত্যাগের মাস। পরিবার ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ও আরেকটি পরিবার। বন্ধুদের সাথে খোলা আকাশের নিচে আমাদের সেন্ট্রাল ফিল্ডে ইফতারের আয়োজনের সামান্য হলেও পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা লাঘব করে। চৈত্রের শেষ বিকেলে খোলা আকাশের নিচে ইফতারের বাহারি রকমের খাবার নিয়ে প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে আযানের অপেক্ষা, এ যেন আমাদের আনন্দ ভাগাভাগির এক অন্যতম অংশ।
লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রশিদুল ইসলাম শুভ বলেন, রমজান মাস মহিমান্বিত মাস। গতিময় এ জীবনের পথচলায় আমাদের অনেকসময় আপনজন ছেড়ে দূরে থেকে জীবন সংগ্রাম করতে হয়। তাই লেখাপড়ার তাগিদে বাড়ি ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি রোযার মাসেও। এখানে বন্ধু-বান্ধব, ভাই-ব্রাদার মিলে একসঙ্গে ইফতার করছি রোজ। মন্দ নয় ভালোই লাগছে। এতে করে দেখা যায়, আমাদের মাঝে বন্ধনগুলোও দৃঢ় হয় এবং সবাই একটা পরিবার হিসেবে অনুভবও করি। ফলে নিজ পরিবারের সবার সঙ্গে ইফতার করার যে একটা আনন্দ তার অনেকটা আমরা সম্মিলিতভাবে ইফতার মাহফিলের মধ্য দিয়ে অনুভব করি।