সাতসতেরো

মাহে রমজান ও আমাদের কেনাকাটা 

মাহে রমজান ইবাদত ও ত্যাগের মাস। এ মাসে বান্দা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ওয়াল জালালের জন্য ইবাদত করে, দিনের বেলায় হালাল পানাহার ও স্ত্রী সম্ভোগকে  পরিহার করে আল্লাহ তাআলার কুদরতি হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার জন্য।

হাদিসে কুদসিতে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেছেন ‘সাওম আমার জন্য আর আমি নিজেই তার প্রতিদান দিব’।  অন্য এক তরজমায় এসেছে, ‘আমি নিজেই তার প্রতিদান হয়ে যাব।’

যারা আল্লাহর হাত থেকে পুরস্কার নিতে চায়, তারা অন্তত মাহে রমজানের শেষ দিনগুলোতে দোকানে-মার্কেটে ঘোরাঘুরি করবে না।  আজকে আমাদের অবস্থা তো এমন হয়েছে যে, নারী-পুরুষ, যুবক-কিশোর এমনকি কোলের শিশু পর্যন্ত নিয়ে আমরা মার্কেটে যাই। বাসা থেকে নিয়ত করে বের হই, শুরুতে এক সপ্তাহ দোকানের পর দোকান, মার্কেটের পর মার্কেট ঘুরব-ফিরব, দেখব তারপর বুঝে শুনে দাম দর করে কেনাকাটা করব। আমাদের ঘোরাঘুরি দেখে মনেই হয় না আমরা মাহে রমজান অতিবাহিত করছি।

গত বছর এতেকাফ থেকে বের হয়ে, ঈদের রাতে  আমার দুই বছর বয়সী মেয়ে সাফফানা বুশরার  জন্য হাতের চুড়ি কিনতে বাসার পাশের মার্কেটে  গিয়েছিলাম। বাইরে প্রচণ্ড গরম, রাস্তায় লোকে লোকারণ্য, মার্কেটগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়। এদের অধিকাংশই নারী। বিস্মিত হয়েছিলাম ১৫-২০ দিন কিংবা এক মাস বয়সী কোলের শিশুকে নিয়ে প্রসূতি মায়েদের দোকানে দোকানে ঘোরাঘুরি দেখে। আমার সাথের ছেলেটা, স্নেহের আব্দুল্লাহ তখন আমাকে বলেছিল আজকের পত্রিকায় এসেছে-মার্কেটে প্রচণ্ড গরমে এক মাস বয়সী একটি শিশু মারা গিয়েছে। আচ্ছা বলুন তো দেখি, এই অবুঝ মা কী দিয়ে তার হৃদয় ও মনকে বুঝ দিবে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আর কবে আমাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে?

আলহামদুলিল্লাহ! আমাদের দেশে হাজারো দ্বীনদার মা -বোন রয়েছেন, যারা তাদের পরিবারের পুরুষদের পছন্দে কাপড় পরিধান করেন। আমার মনে হয় না এতে তাদের কোনো আপত্তি রয়েছে। আর আপত্তি থাকবেই বা কেন?  স্বাভাবিকভাবে মহিলারা ভালো কাপড়-চোপড় পরে, সাজ-গোজ করে থাকে তার পছন্দের পুরুষকে দেখানোর জন্য। আর সেই কাপড়টা যদি সেই পছন্দের মানুষটাই পছন্দ করে কিনে আসে তাহলে তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়।

মুসলিম মহিলারা পর্দার সাথে দোকানে কিংবা বাজারে গিয়ে পছন্দ করে কেনাকাটা করতে পারবেন না বিষয়টি এমন নয়। তবে প্রচণ্ড ভিড়ে, পরপুরুষের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে, বাচ্চা, বাজারের ব্যাগ স্বামীর হাতে দিয়ে দোকানদারের সাথে দর কষাকষি  করে নিজের হাতে টাকা-পয়সা লেনদেন করাটা স্বামীর প্রতি সম্মানবোধ কিংবা ধার্মিকতার প্রকাশ নয়।

আরেকটি কথা না বললেই নয়। যেখানে মাহে রমজানে রোজাদারের সঙ্গে কোমল আচরণ করা, শ্রমিকের বোঝাকে হালকা করে দেওয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহ, সেখানে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় একটি পণ্যের দাম ন্যায্যমূল্য থেকে তিন থেকে চার গুণ বেশি চেয়ে সহজ-সরল ক্রেতাকে বিপাকে ফেলে দেয়। এসব ব্যবসায়ীরাও কি নবী, সিদ্দিকিন ও শহিদদের সাথে জান্নাতি হবে? এরাও কি নবীজীর সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যবসায়ীদের দলভুক্ত হবে? কস্মিনকালেও নয়।

সুদে টাকা নিয়ে দামি স্মার্টফোন, দামি বড় সাইজের  টিভি, আত্মীয়-স্বজনের ঈদের চাহিদা পূরণ করে এমন রোজাদারের সংখ্যাও কিন্তু আমাদের দেশে কম নয়। শ্বশুর বাড়ি থেকে ঈদের বাজার না পেয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, শ্বশুরবাড়ির লোকদের  সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করা সেই রোজাদার ভাইদের কথা আজ না হয় না -ই বলি।  হায়! আমরা কেমন মুসলমান!

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ যদি তা ভেঙে না ফেলে’। আল্লাহ তা’আলা আমাদের লেনদেন, আমাদের চলাফেরা, আমাদের কেনাকাটা, ব্যবসা-বাণিজ্যকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মর্জি মাফিক করার তৌফিক দান করুন।

লেখক: খতিব ও ইসলামী আলোচক