সাতসতেরো

তওবাকারীকে আল্লাহ ভালোবাসেন

নিজের অপরাধসমূহ স্বীকার করে মহান আল্লাহর দরবারে আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত হওয়া ও ভবিষ্যতে উক্ত গুনাহ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করাকে ‘তওবা’ বলে। যার ভেতর অপরাধবোধ নেই সে প্রকৃত মুমিন নয়। যখনই কোনো অপরাধী স্বীয় অপরাধবোধ জাগ্রত করে মহান রবের নিকট অনুতপ্ত হয়ে তওবা করে তখন সে আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হন। প্রিয়নবী (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্তেও দৈনিক একশবার তওবা করতেন। মহান আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন, তওবা করামাত্র তার সকল গুনাহ মাফ করেন এবং তওবাকারীর গুনাহসমূহকে নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেন।

মহান আল্লাহতায়ালা এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো- আন্তরিক তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে, যার তলদেশে ঝরনাসমূহ প্রবাহিত। আল্লাহ সেদিন নবী এবং তাঁর বিশ্বাসী সহচরদেরকে অপদস্থ করবেন না। (সূরা তাহরীম, আয়াত-৮)

মহান আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে আরো ইরশাদ করেন, যারা অজ্ঞতাবশত মন্দ কাজ করে, অতঃপর তওবা করে এবং নিজেকে সংশোধন করে, আপনার পালনকর্তা এসবের পরে তাদের জন্যে অবশ্যই ক্ষমাশীল, দয়ালু। (সূরা নাহল, আয়াত-১১৯) 

দয়াময় রাব্বুল আলামিন সূরা ফুরকানের ৭০নং আয়াতে ইরশাদ করেন, কিন্তু যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা নিজ বান্দার তওবার কারণে তোমাদের ঐ ব্যক্তি থেকেও অধিক আনন্দিত হন, যে জাগ্রত হওয়া মাত্রই ঐ উটটি পেয়ে যায়, যা সে মরুভূমিতে হারিয়ে ফেলেছিল। (সহীহ মুসলিম-৬৭০৯)

প্রিয়নবী (সা.) আরো ইরশাদ করেন, প্রত্যেক আদম সন্তান অপরাধী, আর অপরাধীদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা তওবা করে। (তিরমিযি-২৪৯৯)

প্রিয় পাঠক, তওবা গুনাহ মাফের প্রধান হাতিয়ার। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশকে আমাদের উচিত সর্বাধিক তওবা-ইস্তেগফারের মাধ্যমে নিজেকে পরিশুদ্ধ করা। যদি কোনো বান্দা নফস বা শয়তানের ধোকায় গুনাহ-পাপাচারে জড়িয়ে পড়ে, এমনকি গুনাহ করতে করতে নিজের জন্য জাহান্নামের আজাবকে অবধারিত করে নেয়। অতঃপর অনুতপ্ত হয়ে দয়াময় আল্লাহর নিকট তওবা ও ইস্তেগফার করে। মহান আল্লাহ উক্ত বান্দাকে ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নৈকট্যশীল বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নেন। অতএব কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে মহান রবের দরবারে তওবা-ইস্তেগফার করা এবং দয়াময় মালিকের অনুগ্রহ সান্নিধ্য ও দিদার লাভে প্রয়াসী হওয়া প্রত্যেক মুমিনের জন্য বাঞ্ছনীয়।

লেখক : মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব