উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। কিন্তু, এখানকার জেলেরা সরকারি আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে নদীতে নামছেন মাছ ধরতে। দিন-দুপুরে নদীতে জাল ফেলে জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরছেন তারা। জেলেরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন। সমিতির কিস্তি পরিশোধ ও অনাহার থেকে বাঁচতে নদীতে নামতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়ন থেকে পটুয়াখালীর চর রুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এবং ইলিশা থেকে মনপুরা উপজেলার চর পিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। সরজেমিনে দেখা গেছে, দুটি নদীতেই জাল ফেলে প্রকাশ্যে মাছ ধরছেন জেলেরা। পরে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে সেই মাছ ভোলার বিভিন্ন বাজারে হাক ডাক দিয়ে চলছে বিক্রি।
জেলেরা বলছেন, জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফএর যে চাল দেওয়া হচ্ছে, নিবন্ধিত সব জেলেরা তা পাচ্ছেন না। ফলে বেকার হয়ে পড়া ভোলার জেলেরা চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছেন। বিকল্প আয়ের অভাবে নদীতে যেতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
ভোলার মেঘনা নদীতে মাছ ধরেন জেলে মো. সাগর। তিনি বলেন, বছরের বেশির ভাগ সময় নদী ও সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা থাকে। এবারের নিষেধাজ্ঞায় সরকার থেকে যে পরিমাণ চাল দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে সংসার চলে না। চালের সঙ্গে অন্য বাজারও লাগে। সেগুলো কিনতে টাকার প্রয়োজন হয়। তাই বাধ্য হয়েই নদীতে মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে।
তুলাতুলি মাছঘাট এলাকার জেলে মো. গিয়াসউদ্দিন বলেন, আমার ঘরে লোকসংখ্যা ৮ জন। নিষেধাজ্ঞায় সরকার থেকে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল পাই। ওই চালে এতো বড় সংসারের কিছুই হয় না। তার ওপর অন্যান্য বাজার, সন্তানের পড়ালেখার খরচ তো আছেই। পূর্ব পুরুষরা এ পেশার জড়িত ছিলেন বিধায় ছোটবেলা থেকে এই কাজে আছি। অন্য কাজ করা সম্ভব না। তাই সংসারের সব খরচ যোগাতে নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় বেশিরভাগ জেলে পরিবারগুলোর এনজিওর ঋণের কিস্তির চাপে এখন দিশোহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতি সপ্তাহে ঋণের কিস্তির টাকা যোগাতে নদীতে বাধ্য হয়ে মাছ ধরতে যেতে হয় বলে জানান সবুজ মাঝি নামের অপর এক জেলে।
জেলেরা জানান, ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৮৯ হাজার ৬০০ জেলে পরিবারকে চাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু, সেই বরাদ্দ কম আসায় নিবন্ধিত সব জেলের ভাগ্যে চাল জুটছে না।
জেলে রফিক মিয়া বলেন, অনেক জেলের জেলে কার্ড আছে। কিন্তু, তারা চাল পাননি। খুব কষ্টে তাদের দিন কাটছে। সংসারে এমন অভাব অনটনে মাছ না ধরে কি করে চলবে। তাই বেশির ভাগ জেলেই নদীতে মাছ ধরতে যাচ্ছেন।
এদিকে, ভোলা জেলায় অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যাও প্রচুর। এসব জেলেরা সরকারি সহায়তা পাচ্ছে না বলে জানান তেঁতুলিয়া নদীর জেলে মো. সেলিম।
ভোলার ঘাটগুলোতে দিন-দুুপুরে মাছ বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বেশিরভাগ মৎস্য ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞায় যেন কিছুই যায় আসে না তাদের। মো. আলাউদ্দিন নামের এক মাছ ব্যবসায়ী জানান, জীবিকার তাগিদে মাছ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এই কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার সুযোগ না থাকায় অল্প পরিমাণে হলেও মাছ বেচাকেনা করতে হচ্ছে।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময়ে যে সব জেলেরা নদীতে মাছ ধরতে যান তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪১০ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। এদের বিভিন্ন মেয়াদে জেল জরিমানা করা হয়েছে। এরপরেও নদীতে মাছ ধরার ও মাছ বিক্রির খবর পাচ্ছি আমরা। যখন খবর আসে সঙ্গে সঙ্গে তাদের (জেলে) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির প্রায় ৮৯ হাজার ৬০০ জেলের জন্য ২ মাসের বরাদ্দের ৯৩ ভাগ চাল ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।