‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’-ক্রিকেটে কথাটি খুব প্রচলিত। বাংলাদেশ সেখানে অবিরতভাবে ক্যাচ মাটিতে ফেলেছে। ক্যাচ মিসকে খেলার অংশ বলা হলেও সেটা ধরা-ই যে সবচেয়ে বেশি জরুরী তা যেন ভুলেই যান বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের দুই ম্যাচ হারের কারণ হিসেবে ব্যাটসম্যানদের দায় যতটা বেশি, সমান দাঁড়িপাল্লায় থাকবে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের ব্যর্থতাও। কারণ দুই টেস্টে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা ক্যাচ ছেড়েছেন ১৩টি!
পাঠক ভুল পড়ছেন না। সিলেটে প্রথম টেস্টে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচ মিস দিয়ে সিরিজ শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ওই সময়ে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৫ উইকেটে ৫৭। কামিন্দু নিজের প্রথম বলেই স্লিপে জয়ের হাতে ক্যাচ দেন। হাতে জমাতে না পেরে তাকে জীবন দেন জয়। সেখান থেকে কামিন্দু সেঞ্চুরি করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাথুজ, ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দুর ক্যাচ ছাড়েন যথাক্রমে শাহাদাত, নাহিদ রানা ও লিটন।
দ্বিতীয় টেস্টে চট্টগ্রামে ক্যাচ মিসের মিছিলে লেগেই থাকে। এবার ট্যালিটা কেবল বাড়তেই থাকে। প্রথম ইনিংসে ৮ ক্যাচ মিসের পর দ্বিতীয় ইনিংস ১ ক্যাচ হাতছাড়া করে। সব মিলিয়ে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে ৯ ক্যাচ। যা রীতিমত অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়। টেস্ট জিততে ২০ উইকেট নিতেই হবে। বোলাররা সেই চেষ্টা চালিয়ে যান। সুযোগ তৈরি করেন। কিন্তু ফিল্ডাররা সেই সুযোগ লুফে নিতে না পারলে কষ্টটাই বৃথা হয়। কেন বারবার ক্যাচ মিস হচ্ছে? মনোযোগের ঘাটতি নাকি স্কিলের সমস্যা।
টেস্টে হারের নাজমুল হোসেন শান্তর কোর্টে সবার আগে ফিল্ডিং এবং ক্যাচিং প্রসঙ্গই ছুটে গেল। যেখানে বাংলাদেশের দলপতি আত্মসমর্পণই করলেন। ক্যাচ মিস কি কারণে হচ্ছে সেই উত্তরে অকপট বললেন, কেন হয়েছে এটার জবাব নেই।' তবে প্রস্তুতির কোনো ঘাটতি দেখেন না তিনি, ‘'ফিল্ডিংয়ের ব্যাপারে বলব যে সবাই যথেষ্ট অনুশীলন করে। সবাই অনুশীলনে প্রত্যেকটা ক্যাচও ধরে। কেন হয়েছে এটার জবাব নেই কিন্তু প্রস্তুতি যদি বলেন ফিল্ডিংয়ে সবাই ভালোমতো প্রস্তুত ছিল। কিন্তু ক্যাচগুলো আমরা ধরতে পারিনি।’
চট্টগ্রামে বাংলাদেশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ছিল স্লিপ ফিল্ডিং। ৯টি ক্যাচের ৭টিই স্লিপে ছেড়েছে বাংলাদেশ। নির্ভার যে সব হাত জয়, শাহাদাত, শান্ত, জাকির, লিটন তারাই একের পর এক সুযোগ নষ্ট করেছেন। রঙিন পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পেস বোলাররা ধারাবাহিক ভালো করে যাচ্ছেন। এই সিরিজেও তাদের পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া। কিন্তু সুযোগগুলো ফিল্ডাররা হাতছাড়া করায় খুব বেশি সাফল্য তাদের পকেটে জমা হয়নি।
বোলারদের কঠোর পরিশ্রমের কথা ভেবেও এই সকল ক্যাচ লুফে নেওয়া উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প, ‘আমি অস্বীকার করবো না। এটা প্রতিনিয়তই হচ্ছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। কেউ আসলে ইচ্ছাকৃতভাবে ক্যাচ ছাড়ে না। বোলাররা সুযোগ তৈরি করছে। সেগুলো কাজে লাগানো প্রত্যেকের দায়িত্ব।’