মক্কায় অবস্থিত কাবা শরীফের আশেপাশে ইসলামী সংস্কৃতির স্মৃতিবাহী অনেক নিদর্শন রয়েছে। কাবা শরীফের এলাকা যেখানে শেষ- মিসফালাহ এলাকা সেখান থেকে শুরু। জায়গাটি ইসলামী ইতিহাসের বিবেচনায় অতি গুরুত্বপূর্ণ। তার কারণ এখান থেকেই শুরু হয়েছে হিজরা রোড। এই রাস্তায় নবী করিম (সা.) হিজরতের সময় মক্কা থেকে মদিনার দিকে হেঁটে গিয়েছিলেন। সেজন্যেই এই নামকরণ হয়েছে বলে জানা যায়।
হিজরারোড সংলগ্ন যে হোটেলে ছিলাম সেটির নাম মাওয়াদাত আল হাসনাইন। এটি পবিত্র কাবা শরীফের একেবারেই কাছে।
জায়গাটি শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর স্মৃতিধন্য নয়, এই জায়গার সঙ্গে বিশেষভাবে জড়িয়ে আছে হযরত ইব্রাহিম (আ.), বিবি হাজেরা (আ.) এবং হযরত ইসমাইল (আ.) এর নাম।
কাবা শরীফের ভেতরেই রয়েছে হয়রত ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিবাহী জমজম কূপের পানি খাওয়ার ব্যবস্থা। রয়েছে কাবা শরীফ তাওয়াফ করার পথ।
সাফা-মারওয়া সাঈ করার রাস্তাও এর কাছেই। তবে সেই পাহাড় আর নেই, পাহাড় কেটে সমতল ভূমির আকার দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সাল থেকে এই সমতল রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ে বা একটু জোড়ে হেঁটে হাজীরা সাঈ করে থাকেন। তবে সাফা-মারওয়ার আদি রূপ সংরক্ষণ করার জন্য অল্প একটু জায়গা আগের মতোই রাখা হয়েছে। জায়গাটি কাচের দেয়াল ঘেরা।
মাওয়াদাত আল হাসনাইন থেকে বের হয়ে জেদ্দার দিকে যেতে যেতে চোখে পড়ে কবুতর চত্বর, নান্দনিক রেহেল তোরণ, মক্কা ক্লক টাওয়ার ইত্যাদি। চলুন এসব কিছু সম্পর্কে আরও কিছু জানা যাক।
মসজিদুল হারামের বাইরেই মিসফালাহ এলাকায় অবস্থিত 'কবুতর চত্বর'। ইবরাহিম খলিল সড়কের গোল চত্বর থেকে হিজরা রোডের শুরু পর্যন্ত কম-বেশি কোয়ার্টার কিলো মিটার এলাকা জুড়ে কবুতরের রাজত্ব দেখা যায়। ডানা মেলে উড়ে বেড়ায় কখনও খাবার খেতে নেমে আসে। কবুতরের ডাকে মুখোরিত থাকে পুরো এলাকা। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া-আসা করেন মুসুল্লিরা। কাবা শরীফ থেকে বের হয়েই এমন দৃশ্য দেখা যায়।
এখান থেকে বের হয়ে জেদ্দার পথে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে রেহেল সদৃশ্য নান্দনিক তোরণ।
আরেকটু সামনে এগোলে চোখে পড়বে ‘মক্কা রয়েল ক্লক টাওয়ার’। পবিত্র কাবা শরিফের কিং আবদুল আজিজ বা উম্মে হানি গেটের সামনে এই টাওয়ার। এখানে বসানো হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি ‘মক্কা ঘড়ি’। যা আকারে ১৩০ ফুট। ৩০ কিলোমিটার দূর থেকেও এই ঘড়ি দেখে সময় নির্ধারণ করা যায়।
কাবা শরীফের ভেতরে জমজমের পানির খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। হাজিরা এখান থেকে ওয়ানটাইম গ্লাসে জমজমের পানি পান করেন। অনেক পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যান।
সাফা-মারওয়া পাহাড় এটা কেটে সমভূমি বানিয়ে একটা ঘরের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। হজের আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে সাফা-মারওয়াতে সাতবার দৌঁড়াতে হয় বা সাঈ করতে হয়। ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে তার স্ত্রী হাজেরা (আ.) ও শিশুপুত্র ইসমাইল (আ.) কে সামান্য কিছু খাদ্যদ্রব্যসহ সাফা ও মারওয়ার কাছে মরুভূমিতে রেখে আসেন। সেই খাবার শেষ হয়ে এলে খাবার ও পানির জন্য এই দুই পাহাড়ের মাঝে সাতবার যাওয়া আসা করেন। এসময় তিনি ইসমাইল (আ) কে রেখে যান। হাজেরা প্রথমে আশেপাশের এলাকা দেখার জন্য সাফা পাহাড়ে উঠেন। এরপর তিনি কাফেলার দেখা পাওয়ার আশায় ছিলেন । যাতে সামান্য পানি চেয়ে নিতে পারেন। কিন্তু কাফেলার দেখা পান না। নিরাশ হয়ে পার্শ্ববর্তী মারওয়া পাহাড়ে উঠেন। তখন মরুভুমিতে মরিচিকা দেখে তার দৃষ্টিভ্রম হয়। সামান্য পানি পাওয়ার আশায় সাফা থেকে মারওয়া এভাবে সাতবার চলাচলের পর ফিরে এসে তিনি দেখতে পান যে ক্রন্দনরত শিশু ইসমাইল (আ) এর পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে পানির ধারা বের হচ্ছে। এটি জমজম কুয়া বা জমজম কূপ নামে পরিচিত।
সেই থেকে এই পানির উৎসটি টিকে আছে।
এইসব স্মৃতিবাহী নিদর্শন যে কাউকে প্রশান্তি দিতে পারে আর দিতে পারি স্বর্গীয় অনুভূতি।