দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। এবার ঈদের ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলা নববর্ষের ছুটি। ফলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে ভ্রমণে আসবেন লাখো পর্যটক। সারা বছরের কর্মব্যস্ততা শেষে নীল জলরাশিতে গা ভাসাতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসবেন তারা। শুধু সমুদ্র সৈকতই নয়, নয়নাভিরাম হিমছড়ি ঝর্না, রূপসী গোয়ালিয়া, পাথররাণী পাটোয়ারটেক-ইনানী সৈকত, নানা রঙের সাম্পানের সৈকত শামলাপুর এবং ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিনড্রাইভেও যাবেন পর্যটকরা।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ১০ দিনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের ৫০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, ঈদের সময় প্রতিটি হোটেল-মোটেল পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। ভ্রমণপিপাসুদের নজর কাড়তে জোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে। আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও দোকানগুলো সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারের এক ডজন বেড়ানোর স্থান
সমুদ্রশহরে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় মাঠে রয়েছে পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের একাধিক টিম। পর্যটকরা যাতে হয়রানি, চুরি, ছিনতাই, ইভটিজিং ও অসৎ ব্যবসায়ী ও ক্যামেরাম্যানদের মাধ্যমে প্রতারিত না হন সেজন্য সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আবাসিক হোটেল মালিকেরা বলছেন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেলে সব ধরনের আয়োজনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। এখন শুধু পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর পালা।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেন, ১১ এপ্রিল থেকে পর্যটকদের আসা শুরু হবে। বেশি পর্যটক আসবেন ঈদের পরের দিন থেকে। ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ থাকায় ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত আরও কিছু পর্যটক থাকবেন। সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে দেড় লাখ পর্যটকের আগমন ঘটতে পারে। সৈকত ও শহর এলাকার পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস-কটেজের ৫০ শতাংশ কক্ষ অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বিগত ঈদগুলোতে অনেক বেশি পর্যটক আসতেন কক্সবাজারে। হোটেল-মোটেলে পর্যটকে গিজ গিজ করতো। এখন নতুন হোটেলের সংখ্যা বেড়েছে। তাই হোটেলগুলোতে পর্যটকের চাপ তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। এছাড়া, পদ্মাসেতু হওয়ায় ঢাকা ও এর আশেপাশের পর্যটকরা কম খরচে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ করেন। এবারের ঈদে যারা কক্সবাজার আসবেন তাদের জন্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে কিছু সংখ্যক হোটেল।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা রাইজিংবিডিকে বলেন, ১১ এপ্রিল থেকে কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন শুরু হবে। ঈদ ও বাংলা নববর্ষসহ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ছুটিতে ভিড় থাকবে। ট্রেনের ব্যবস্থা থাকায় অনেকে সকালে এসে বিকেলেও চলে যেতে পারেন। আর যারা ৩ থেকে ৪ দিন অবস্থান করবেন তাদের হোটেল-রেস্তোরাঁয় থাকা-খাওয়া এবং অল্পস্বল্প কেনাকাটা ও গাড়িভাড়াসহ পর্যটন খাতে প্রতি একজনে ১০ হাজার টাকার ব্যবসা হতে পারে।
এদিকে, ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ১০ দিনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসা তূর্ণা এক্সপ্রেস, মহানগর এক্সপ্রেস এবং চাঁদপুর থেকে আসা মেঘনা এক্সপ্রেস কক্সবাজার পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী। এই ঈদে পর্যটকরা ট্রেনে চড়ে আনন্দ-খুশিতে মাতবেন বলে তিনি আশা করেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ঈদে কক্সবাজার বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম সমুদ্রসৈকত ছাড়াও টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, চকরিয়া ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক এলাকায় সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিয়ে যাবে। কক্সবাজার শহরসহ জেলার বিভিন্ন দর্শনীয় এলাকায় পর্যটকদের নিরাপত্তা দেবে জেলা পুলিশ।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। পর্যটকরা তাদের সমস্যা সরাসরি ট্যুরিস্ট পুলিশকে অবগত করতে পারবেন। যারা পর্যটকদের হয়রানি করবে তাদের মুহূর্তের মধ্যে আটক করার জন্য আধুনিক সিস্টেম চালু করা হয়েছে। এছাড়া, একাধিক সাদাপোশাকে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা মাঠে থাকবেন, যাতে পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ঘুরাফেরা করতে পারেন।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ বলেন, চলমান মিয়ানমার সংঘাতে সীমান্তে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসার কারণসহ অন্যান্য কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টি নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে, পর্যটন খাতে আয় কমেছে। তবে, কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় বেড়াতে আসা পর্যটকদের সেবাদানে ঝিনুক, আচার, বার্মিজ ও দেশীয় পণ্যসামগ্রীর দোকানগুলোর ব্যবসায় ভালো হবে বলে আশা রাখি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ঈদে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা থাকবে। অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া আদায় বন্ধ এবং খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে সক্রিয় থাকবে। পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কক্সবাজার ঘুরে বেড়ানোর ব্যাপারে জেলা প্রশাসন থেকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হবে।