শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুর জেলায় ছোটবড় প্রায় ৫ হাজার শিল্পকারখানা রয়েছে। আর ৩ দিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর। আজ সোমবার ও আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে পর্যায়ক্রমে ছুটি হবে সব কারখানা। একসঙ্গে লাখো মানুষ ছুটি পেয়ে বাড়িতে যাত্রা শুরু করবেন, ফলে মহাসড়কে বাড়বে চাপ।
শুধু গাজীপুরের অবস্থানরত শ্রমিক নয়, নারায়ণগঞ্জ, গাবতলী, আশুলিয়া, বাইপাল, সাভার ও নবীনগর এলাকা থেকে আসা বাসগুলো চন্দ্রা এলাকা পার হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে প্রবেশ করে। ফলে প্রতি বছর চন্দ্রায় ভোগান্তি হয়।
অন্যদিকে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, কলেজ গেইট, গাজীপুর চৌরাস্তা, চান্দনা চৌরাস্তা, সালনা, পোড়াবাড়ী, রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা, হোতাপাড়া, মেম্বারবাড়ি, বাঘেরবাজার, গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি, আনসার রোড, মাওনা চৌরাস্তা, এমসি বাজার, নয়নপুর ও জৈনাবাজার স্যান্ডগুলোতে থাকে যানজট ও যাত্রীর চাপ। রোববারে এসব স্টেশনে তেমন যানজট ও ভোগান্তি ছিল না৷ তবে পরিবহন ও কারখানা সূত্র বলছে, সব প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে সড়কে ভোগান্তি হবে।
বেতন-বোনাস দিয়েছে ১ হাজার ৩১৬ কারখানা গাজীপুরে বিজিএমই, বিকেএমই, বিটিএমসহ মোট ২ হাজার ২২৩ টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বোনাস দিয়েছে ১ হাজার ৩১৬ শিল্পকারখানা। তবে ঈদের আগেই বোনাস সব কারখানা পরিশোধ করবে৷
এছাড়াও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করেছে ২ হাজার ১৯৫টি কারখানা।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইমরান আহমেদ রাইজিংবিডিকে বলেন, রোববার পর্যন্ত ১ হাজার ৩১৬টি কারখানা বোনাস দিয়েছে। চলতি মাসের বেতনের ক্ষেত্রে একটু পার্থক্য আছে। কিছু কারখানা অর্ধেক বেতন দিবে, কিছু কারখানা ফুল মাসের বেতন দিবে। আশা করছি, মঙ্গলবারের মধ্যে কারখানাগুলো বেতন বোনাস পরিশোধ করবে।
পোশাক শ্রমিকদের জন্য ৩ দিনের বিশেষ ট্রেন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গার্মেন্টসে কর্মরত ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে গাজীপুরের জয়দেবপুর রেলস্টেশন থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত তিনটি স্পেশাল ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৭, ৮ ও ৯ এপ্রিল ৩ দিনে মোট ৩টি স্পেশাল ট্রেন রাত ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশন থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর স্টেশনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটি জয়দেবপুর থেকে ছেড়ে গিয়ে নাটোর, সান্তাহার, জয়পুরহাট, বিরামপুর, ফুলবাড়ী হয়ে সর্বশেষ দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌঁছাবে। ট্রেনটিতে মোট আসন সংখ্যা থাকবে ৭১৬টি, যার মাঝে ১ম শ্রেণির রয়েছে ২৪টি। বরাদ্দকৃত সব টিকিট কেবলমাত্র অনলাইনে পাওয়া যাবে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. হাসিবুর রহমান জানান, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরই অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলায় বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে জয়দেবপুর থেকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ৩টি স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়েছে।
১০টি ফ্লাইওভার চালু তবুও যানজটের শঙ্কা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ও আশপাশের শিল্পাঞ্চল থেকে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা। সময় যতো যাচ্ছে মহাসড়কে বাড়ছে যাত্রীর চাপ৷ চলাচলের সুবিধার্থে ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে নাওজোর ফ্লাইওভার, সফিপুর ফ্লাইওভার, ৪-লেনের কোনাবাড়ি ফ্লাইওভার, ৪-লেনের চন্দ্রা ফ্লাইওভার, ৪-লেনের কালিয়াকৈর আন্ডারপাস ফ্লাইওভার চলমান রয়েছে।
এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিএনএস টু কলেজগেট ফ্লাইওভার, ইউটার্ন-১ গাজীপুরা ফ্লাইওভার, ইউটার্ন-২ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ফ্লাইওভার, ভোগড়া ফ্লাইওভার ও চৌরাস্তা ফ্লাইওভারসহ মোট ১০টি ফ্লাইওভার চালু রয়েছে। তবুও এবারের ঈদে যানজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসব ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় যানজট থেকে মুক্তির আশা করা হয়। তবে অপরিকল্পিত কাজ, বিআরটি চলমান কাজ, ফুটপাতে দোকান, নির্মাণসামগ্রী রাখায় এবারের ঈদেও যানজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া সোমবার থেকে সব শিল্পকারখানা ছুটি হবে৷ একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক মানুষ মহাসড়কে একসঙ্গে বের হলে সৃষ্টি হবে যানজট। এদিকে, চন্দ্রা মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ না নির্মাণ করে ঈদের আগে সড়ক বিভাজক তৈরি করায় এপার থেকে ওপারে যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন। নতুন করে সড়ক বিভাজক নির্মাণ করায় উত্তরবঙ্গের ঘরমুখী মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, এবারের ঈদযাত্রা অন্যান্যবারের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেময় হবে। এবার চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া এলাকায় দুটি উড়াল সড়কসহ টঙ্গী থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৭টি ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় আশা করছি আরও স্বাচ্ছন্দ্যময় হবে ঈদযাত্রা। মহাসড়কে যানবাহন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত রেকার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে যানবাহন বিকল হলে দ্রত সরিয়ে নেওয়া যায়।
ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ঈদযাত্রা সুশৃঙ্খল রাখতে ও যানজট নিরসনে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড ও মহাসড়কের পাশে যেনো ঈদের আগে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এজন্য রোববার দুপুরে এ অভিযান পরিচালিত হয়৷
গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার সুমাইয়া মমিন রাইজিংবিডিকে বলেন, মহাসড়কে যানচলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। মহাসড়কের দশ মিটারের মধ্যে থাকা অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ঘরমুখো মানুষ যেনো নির্বিঘ্নে গ্রামে যেতে পারে এজন্য সবরকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিল্পকারখানা শ্রমিকরা যেনো বেতন বোনাস পায়, সেটিরও মনিটরিং করা হচ্ছে।